বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০১১

বিদ্রোহী

কাজী নজরুল ইসলাম

বল বীর -
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি’ আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!
বল বীর -
বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি’
চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি’
ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া
খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া,
উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর!
মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!
বল বীর -
আমি চির উন্নত শির!

আমি চিরদূর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস,
মহা- প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস!
আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর,
আমি দুর্বার,
আমি ভেঙে করি সব চুরমার!
আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,
আমি দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল!
আমি মানি না কো কোন আইন,
আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন!
আমি ধূর্জটি, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর
আমি বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহী-সুত বিশ্ব-বিধাতৃর!
বল বীর -
চির-উন্নত মম শির!

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি,
আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’।
আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ,
আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ।
আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল,
আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’
পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’
ফিং দিয়া দিই তিন দোল;
আমি চপলা-চপল হিন্দোল।
আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা,
করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা,
আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা!
আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর;
আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর!
বল বীর -
আমি চির উন্নত শির!

আমি চির-দুরন্ত দুর্মদ,
আমি দুর্দম, মম প্রাণের পেয়ালা হর্দম হ্যায় হর্দম ভরপুর মদ।

আমি হোম-শিখা, আমি সাগ্নিক জমদগ্নি,
আমি যজ্ঞ, আমি পুরোহিত, আমি অগ্নি।
আমি সৃষ্টি, আমি ধ্বংস, আমি লোকালয়, আমি শ্মশান,
আমি অবসান, নিশাবসান।
আমি ইন্দ্রাণী-সুত হাতে চাঁদ ভালে সূর্য
মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর রণ-তূর্য;
আমি কৃষ্ন-কন্ঠ, মন্থন-বিষ পিয়া ব্যথা-বারিধীর।
আমি ব্যোমকেশ, ধরি বন্ধন-হারা ধারা গঙ্গোত্রীর।
বল বীর -
চির - উন্নত মম শির!

আমি সন্ন্যাসী, সুর-সৈনিক,
আমি যুবরাজ, মম রাজবেশ ম্লান গৈরিক।
আমি বেদুঈন, আমি চেঙ্গিস,
আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কুর্ণিশ!
আমি বজ্র, আমি ঈশান-বিষাণে ওঙ্কার,
আমি ইস্রাফিলের শিঙ্গার মহা হুঙ্কার,
আমি পিণাক-পাণির ডমরু ত্রিশূল, ধর্মরাজের দন্ড,
আমি চক্র ও মহা শঙ্খ, আমি প্রণব-নাদ প্রচন্ড!
আমি ক্ষ্যাপা দুর্বাসা, বিশ্বামিত্র-শিষ্য,
আমি দাবানল-দাহ, দাহন করিব বিশ্ব।
আমি প্রাণ খোলা হাসি উল্লাস, – আমি সৃষ্টি-বৈরী মহাত্রাস,
আমি মহা প্রলয়ের দ্বাদশ রবির রাহু গ্রাস!
আমি কভূ প্রশান্ত কভূ অশান্ত দারুণ স্বেচ্ছাচারী,
আমি অরুণ খুনের তরুণ, আমি বিধির দর্পহারী!
আমি প্রভোন্জনের উচ্ছ্বাস, আমি বারিধির মহা কল্লোল,
আমি উদ্জ্বল, আমি প্রোজ্জ্জ্বল,
আমি উচ্ছ্বল জল-ছল-ছল, চল-ঊর্মির হিন্দোল-দোল!

আমি বন্ধন-হারা কুমারীর বেণু, তন্বী-নয়নে বহ্ণি
আমি ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম উদ্দাম, আমি ধন্যি!
আমি উন্মন মন উদাসীর,
আমি বিধবার বুকে ক্রন্দন-শ্বাস, হা হুতাশ আমি হুতাশীর।
আমি বন্চিত ব্যথা পথবাসী চির গৃহহারা যত পথিকের,
আমি অবমানিতের মরম বেদনা, বিষ – জ্বালা, প্রিয় লান্চিত বুকে গতি ফের
আমি অভিমানী চির ক্ষুব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যথা সুনিবিড়
চিত চুম্বন-চোর কম্পন আমি থর-থর-থর প্রথম প্রকাশ কুমারীর!
আমি গোপন-প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল-ক’রে দেখা অনুখন,
আমি চপল মেয়ের ভালোবাসা, তা’র কাঁকন-চুড়ির কন-কন!
আমি চির-শিশু, চির-কিশোর,
আমি যৌবন-ভীতু পল্লীবালার আঁচড় কাঁচলি নিচোর!
আমি উত্তর-বায়ু মলয়-অনিল উদাস পূরবী হাওয়া,
আমি পথিক-কবির গভীর রাগিণী, বেণু-বীণে গান গাওয়া।
আমি আকুল নিদাঘ-তিয়াসা, আমি রৌদ্র-রুদ্র রবি
আমি মরু-নির্ঝর ঝর ঝর, আমি শ্যামলিমা ছায়া-ছবি!
আমি তুরীয়ানন্দে ছুটে চলি, এ কি উন্মাদ আমি উন্মাদ!
আমি সহসা আমারে চিনেছি, আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ!

আমি উথ্থান, আমি পতন, আমি অচেতন-চিতে চেতন,
আমি বিশ্ব-তোরণে বৈজয়ন্তী, মানব-বিজয়-কেতন।
ছুটি ঝড়ের মতন করতালি দিয়া
স্বর্গ মর্ত্য-করতলে,
তাজী বোররাক আর উচ্চৈঃশ্রবা বাহন আমার
হিম্মত-হ্রেষা হেঁকে চলে!

আমি বসুধা-বক্ষে আগ্নিয়াদ্রি, বাড়ব-বহ্ণি, কালানল,
আমি পাতালে মাতাল অগ্নি-পাথার-কলরোল-কল-কোলাহল!
আমি তড়িতে চড়িয়া উড়ে চলি জোর তুড়ি দিয়া দিয়া লম্ফ,
আমি ত্রাস সন্চারি ভুবনে সহসা সন্চারি’ ভূমিকম্প।

ধরি বাসুকির ফণা জাপটি’ -
ধরি স্বর্গীয় দূত জিব্রাইলের আগুনের পাখা সাপটি’।
আমি দেব শিশু, আমি চঞ্চল,
আমি ধৃষ্ট, আমি দাঁত দিয়া ছিঁড়ি বিশ্ব মায়ের অন্চল!
আমি অর্ফিয়াসের বাঁশরী,
মহা- সিন্ধু উতলা ঘুমঘুম
ঘুম চুমু দিয়ে করি নিখিল বিশ্বে নিঝঝুম
মম বাঁশরীর তানে পাশরি’
আমি শ্যামের হাতের বাঁশরী।
আমি রুষে উঠি’ যবে ছুটি মহাকাশ ছাপিয়া,
ভয়ে সপ্ত নরক হাবিয়া দোজখ নিভে নিভে যায় কাঁপিয়া!
আমি বিদ্রোহ-বাহী নিখিল অখিল ব্যাপিয়া!

আমি শ্রাবণ-প্লাবন-বন্যা,
কভু ধরনীরে করি বরণীয়া, কভু বিপুল ধ্বংস-ধন্যা-
আমি ছিনিয়া আনিব বিষ্ণু-বক্ষ হইতে যুগল কন্যা!
আমি অন্যায়, আমি উল্কা, আমি শনি,
আমি ধূমকেতু-জ্বালা, বিষধর কাল-ফণী!
আমি ছিন্নমস্তা চন্ডী, আমি রণদা সর্বনাশী,
আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি!

আমি মৃন্ময়, আমি চিন্ময়,
আমি অজর অমর অক্ষয়, আমি অব্যয়।
আমি মানব দানব দেবতার ভয়,
বিশ্বের আমি চির-দুর্জয়,
জগদীশ্বর-ঈশ্বর আমি পুরুষোত্তম সত্য,
আমি তাথিয়া তাথিয়া মাথিয়া ফিরি স্বর্গ-পাতাল মর্ত্য!
আমি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!!
আমি চিনেছি আমারে, আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ!!

আমি পরশুরামের কঠোর কুঠার
নিঃক্ষত্রিয় করিব বিশ্ব, আনিব শান্তি শান্ত উদার!
আমি হল বলরাম-স্কন্ধে
আমি উপাড়ি’ ফেলিব অধীন বিশ্ব অবহেলে নব সৃষ্টির মহানন্দে।
মহা-বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত,
যবে উত্‍পীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না -
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না -
বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত।


আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন,
আমি স্রষ্টা-সূদন, শোক-তাপ হানা খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন!
আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দেবো পদ-চিহ্ন!
আমি খেয়ালী-বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন!

আমি চির-বিদ্রোহী বীর -
বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির!

কাণ্ডারী হুশিয়ার!

কাজী নজরুল ইসলাম






দুর্গম গিরি কান্তার-মরু দুস্তর পারাবার
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে যাত্রীরা হুশিয়ার!
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভূলিতেছে মাঝি পথ,
ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মৎ?
কে আছ জোয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যত।
এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার!!


তিমির রাত্রি, মাতৃমন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান!
যুগ-যুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান!
ফেনাইয়া উঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান,
ইহাদের পথে, নিতে হবে সাথে, দিতে হবে অধিকার!!


অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানেনা সন্তরণ,
কান্ডারী! আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তিপণ!
“হিন্দু না ওরা মুসলিম?” ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?
কান্ডারী! বল ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা’র!


গিরি-সংকট, ভীরু যাত্রীরা, গুরু গরজায় বাজ,
পশ্চাৎ-পথ-যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ
কান্ডারী! তুমি ভূলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ-মাঝ?
‘করে হানাহানি, তবু চল টানি’, নিয়াছ যে মহাভার!


কান্ডারী! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর,
বাঙ্গালীর খুনে লাল হ’ল যেথা ক্লাইভের খঞ্জর!
ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায়, ভারতের দিবাকর
উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়া পুনর্বার।


ফাঁসির মঞ্চে যারা গেয়ে গেল জীবনের জয়গান,
আসি’ অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন বলিদান?
আজি পরীক্ষা জাতির অথবা জাতের করিবে ত্রান?
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, কান্ডারী হুঁশিয়ার!

আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে

কাজী নজরুল ইসলাম

আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে–
মোর মুখ হাসে মোর চোখ হাসে মোর টগবগিয়ে খুন হাসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে।

আজকে আমার রুদ্ধ প্রাণের পল্বলে -
বান ডেকে ঐ জাগল জোয়ার দুয়ার – ভাঙা কল্লোলে।
আসল হাসি, আসল কাঁদন
মুক্তি এলো, আসল বাঁধন,
মুখ ফুটে আজ বুক ফাটে মোর তিক্ত দুখের সুখ আসে।
ঐ রিক্ত বুকের দুখ আসে -
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!

আসল উদাস, শ্বসল হুতাশ
সৃষ্টি-ছাড়া বুক-ফাটা শ্বাস,
ফুললো সাগর দুললো আকাশ ছুটলো বাতাস,
গগন ফেটে চক্র ছোটে, পিণাক-পাণির শূল আসে!
ঐ ধূমকেতু আর উল্কাতে
চায় সৃষ্টিটাকে উল্টাতে,

আজ তাই দেখি আর বক্ষে আমার লক্ষ বাগের ফুল হাসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!
আজ হাসল আগুন, শ্বসল ফাগুন,
মদন মারে খুন-মাখা তূণ
পলাশ অশোক শিমুল ঘায়েল
ফাগ লাগে ঐ দিক-বাসে
গো দিগ বালিকার পীতবাসে;

আজ রঙ্গন এলো রক্তপ্রাণের অঙ্গনে মোর চারপাশে
আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে!
আজ কপট কোপের তূণ ধরি,
ঐ আসল যত সুন্দরী,
কারুর পায়ে বুক ডলা খুন, কেউ বা আগুন,
কেউ মানিনী চোখের জলে বুক ভাসে!
তাদের প্রাণের ‘বুক-ফাটে-তাও-মুখ-ফোটে-না’ বাণীর বীণা মোর পাশে
ঐ তাদের কথা শোনাই তাদের
আমার চোখে জল আসে
আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে!

আজ আসল ঊষা, সন্ধ্যা, দুপুর,
আসল নিকট, আসল সুদূর
আসল বাধা-বন্ধ-হারা ছন্দ-মাতন
পাগলা-গাজন-উচ্ছ্বাসে!
ঐ আসল আশিন শিউলি শিথিল
হাসল শিশির দুবঘাসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!

আজ জাগল সাগর, হাসল মরু
কাঁপল ভূধর, কানন তরু
বিশ্ব-ডুবান আসল তুফান, উছলে উজান
ভৈরবীদের গান ভাসে,
মোর ডাইনে শিশু সদ্যোজাত জরায়-মরা বামপাশে।

মন ছুটছে গো আজ বল্গাহারা অশ্ব যেন পাগলা সে।
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!!

মানুষ

কাজী নজরুল ইসলাম

গাহি সাম্যের গান-
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান্‌ ।
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,
সব দেশে সব কালে ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।-
‘পূজারী দুয়ার খোলো,
ক্ষুধার ঠাকুর দাঁড়ায়ে দুয়ারে পূজার সময় হ’ল!’
স্বপন দেখিয়া আকুল পূজারী খুলিল ভজনালয়,
দেবতার বরে আজ রাজা-টাজা হ’য়ে যাবে নিশ্চয়!
জীর্ণ-বস্ত্র শীর্ণ-গাত্র, ক্ষুধায় কন্ঠ ক্ষীণ
ডাকিল পান’, ‘দ্বার খোল বাবা, খাইনি ক’ সাত দিন!’
সহসা বন্ধ হ’ল মন্দির, ভুখারী ফিরিয়া চলে,
তিমির রাত্রি, পথ জুড়ে তার ক্ষুধার মানিক জ্বলে!
ভুখারী ফুকারি’ কয়,
‘ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয়!’
মসজিদে কাল শির্‌নী আছিল,-অঢেল গোস–র”টি
বাঁচিয়া গিয়াছে, মোল্লা সাহেব হেসে তাই কুটি কুটি,
এমন সময় এলো মুসাফির গায়ে আজারির চিন্‌
বলে, ‘ বাবা, আমি ভূখা-ফাকা আমি আজ নিয়ে সাত দিন!’
তেরিয়া হইয়া হাঁকিল মোল্লা-‘ভ্যালা হ’ল দেখি লেঠা,
ভূখা আছ মর গো-ভাগাড়ে গিয়ে! নামাজ পড়িস বেটা?’
ভূখারী কহিল, ‘না বাবা!’ মোল্লা হাঁকিল-‘তা হলে শালা
সোজা পথ দেখ!’ গোস–র”টি নিয়া মসজিদে দিল তালা!
ভুখারী ফিরিয়া চলে,
চলিতে চলিতে বলে-
‘আশিটা বছর কেটে গেল, আমি ডাকিনি তোমায় কভু,
আমার ক্ষুধার অন্ন তা ব’লে বন্ধ করনি প্রভু।
তব মস্‌জিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবী।
মোল্লা-পুর”ত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবী!’
কোথা চেঙ্গিস্‌, গজনী-মামুদ, কোথায় কালাপাহাড়?
ভেঙে ফেল ঐ ভজনালয়ের যত তালা-দেওয়া-দ্বার!
খোদার ঘরে কে কপাট লাগায়, কে দেয় সেখানে তালা?
সব দ্বার এর খোলা রবে, চালা হাতুড়ি শাবল চালা!
হায় রে ভজনালয়,
তোমার মিনারে চড়িয়া ভন্ড গাহে স্বার্থের জয়!
মানুষেরে ঘৃণা করি’
ও’ কারা কোরান, বেদ, বাইবেল চুম্বিছে মরি’ মরি’
ও’ মুখ হইতে কেতাব গ্রন’ নাও জোর ক’রে কেড়ে,
যাহারা আনিল গ্রন’-কেতাব সেই মানুষেরে মেরে,
পূজিছে গ্রন’ ভন্ডের দল! মূর্খরা সব শোনো,
মানুষ এনেছে গ্রন’;-গ্রন’ আনেনি মানুষ কোনো।
আদম দাউদ ঈসা মুসা ইব্রাহিম মোহাম্মাদ
কৃষ্ণ বুদ্ধ নানক কবীর,-বিশ্বের সম্পদ,
আমাদেরি এঁরা পিতা-পিতামহ, এই আমাদের মাঝে
তাঁদেরি রক্ত কম-বেশী ক’রে প্রতি ধমনীতে রাজে!
আমরা তাঁদেরি সন্তান, জ্ঞাতি, তাঁদেরি মতন দেহ,
কে জানে কখন মোরাও অমনি হয়ে যেতে পারি কেহ।
হেসো না বন্ধু! আমার আমি সে কত অতল অসীম,
আমিই কি জানি-কে জানে কে আছে
আমাতে মহামহিম।

হয়ত আমাতে আসিছে কল্কি, তোমাতে মেহেদী ঈসা,
কে জানে কাহার অন- ও আদি, কে পায় কাহার দিশা?
কাহারে করিছ ঘৃণা তুমি ভাই, কাহারে মারিছ লাথি?
হয়ত উহারই বুকে ভগবান্‌ জাগিছেন দিবা-রাতি!
অথবা হয়ত কিছুই নহে সে, মহান্‌ উ”চ নহে,
আছে ক্লেদাক্ত ক্ষত-বিক্ষত পড়িয়া দুঃখ-দহে,
তবু জগতের যত পবিত্র গ্রন’ ভজনালয়
ঐ একখানি ক্ষুদ্র দেহের সম পবিত্র নয়!
হয়ত ইহারি ঔরসে ভাই ইহারই কুটীর-বাসে
জন্মিছে কেহ- জোড়া নাই যার জগতের ইতিহাসে!
যে বাণী আজিও শোনেনি জগৎ, যে মহাশক্তিধরে
আজিও বিশ্ব দেখনি,-হয়ত আসিছে সে এরই ঘরে!
ও কে? চন্ডাল? চম্‌কাও কেন? নহে ও ঘৃণ্য জীব!
ওই হ’তে পারে হরিশচন্দ্র, ওই শ্মশানের শিব।
আজ চন্ডাল, কাল হ’তে পারে মহাযোগী-সম্রাট,
তুমি কাল তারে অর্ঘ্য দানিবে, করিবে নান্দী-পাঠ।
রাখাল বলিয়া কারে করো হেলা, ও-হেলা কাহারে বাজে!
হয়ত গোপনে ব্রজের গোপাল এসেছে রাখাল সাজে!
চাষা ব’লে কর ঘৃণা!
দে’খো চাষা-রূপে লুকায়ে জনক বলরাম এলো কি না!
যত নবী ছিল মেষের রাখাল, তারাও ধরিল হাল,
তারাই আনিল অমর বাণী-যা আছে র’বে চিরকাল।
দ্বারে গালি খেয়ে ফিরে যায় নিতি ভিখারী ও ভিখারিনী,
তারি মাঝে কবে এলো ভোলা-নাথ গিরিজায়া, তা কি চিনি!
তোমার ভোগের হ্রাস হয় পাছে ভিক্ষা-মুষ্টি দিলে,
দ্বারী দিয়ে তাই মার দিয়ে তুমি দেবতারে খেদাইলে।
সে মার রহিল জমা-
কে জানে তোমায় লাঞ্ছিতা দেবী করিয়াছে কিনা ক্ষমা!

বন্ধু, তোমার বুক-ভরা লোভ, দু’চোখে স্বার্থ-ঠুলি,
নতুবা দেখিতে, তোমারে সেবিতে দেবতা হ’য়েছে কুলি।
মানুষের বুকে যেটুকু দেবতা, বেদনা-মথিত সুধা,
তাই লুটে তুমি খাবে পশু? তুমি তা দিয়ে মিটাবে ক্ষুধা?
তোমার ক্ষুধার আহার তোমার মন্দোদরীই জানে
তোমার মৃত্যু-বাণ আছে তব প্রাসাদের কোন্‌খানে!
তোমারি কামনা-রাণী
যুগে যুগে পশু, ফেলেছে তোমায় মৃত্যু-বিবরে টানি’।

সাম্যবাদী

কাজী নজরুল ইসলাম

গাহি সাম্যের গান-
যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান
যেখানে মিশছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুস্‌লিম-ক্রীশ্চান।
গাহি সাম্যের গান!
কে তুমি?- পার্সী? জৈন? ইহুদী? সাঁওতাল, ভীল, গারো?
কন্‌ফুসিয়াস্‌? চার্বআখ চেলা? ব’লে যাও, বলো আরো!
বন্ধু, যা-খুশি হও,
পেটে পিঠে কাঁধে মগজে যা-খুশি পুঁথি ও কেতাব বও,
কোরান-পুরাণ-বেদ-বেদান্ত-বাইবেল-ত্রিপিটক-
জেন্দাবেস্তা-গ্রন্থসাহেব প’ড়ে যাও, য্ত সখ-
কিন্তু, কেন এ পন্ডশ্রম, মগজে হানিছ শূল?
দোকানে কেন এ দর কষাকষি? -পথে ফুটে তাজা ফুল!
তোমাতে রয়েছে সকল কেতাব সকল কালের জ্ঞান,
সকল শাস্র খুঁজে পাবে সখা, খুলে দেখ নিজ প্রাণ!
তোমাতে রয়েছে সকল ধর্ম, সকল যুগাবতার,
তোমার হৃষয় বিশ্ব-দেউল সকল দেবতার।
কেন খুঁজে ফের’ দেবতা ঠাকুর মৃত পুঁথি -কঙ্কালে?
হাসিছেন তিনি অমৃত-হিয়ার নিভৃত অন্তরালে!

বন্ধু, বলিনি ঝুট,
এইখানে এসে লুটাইয়া পড়ে সকল রাজমুকুট।
এই হৃদ্য়ই সে নীলাচল, কাশী, মথুরা, বৃন্দাবন,
বুদ্ধ-গয়া এ, জেরুজালেম্‌ এ, মদিনা, কাবা-ভবন,
মস্‌জিদ এই, মন্দির এই, গির্জা এই হৃদয়,
এইখানে ব’সে ঈসা মুসা পেল সত্যের পরিচয়।
এই রণ-ভূমে বাঁশীর কিশোর গাহিলেন মহা-গীতা,
এই মাঠে হ’ল মেষের রাখাল নবীরা খোদার মিতা।
এই হৃদয়ের ধ্যান-গুহা-মাঝে বসিয়া শাক্যমুনি
ত্যজিল রাজ্য মানবের মহা-বেদনার ডাক শুনি’।
এই কন্দরে আরব-দুলাল শুনিতেন আহবান,
এইখানে বসি’ গাহিলেন তিনি কোরানের সাম-গান!
মিথ্যা শুনিনি ভাই,
এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির-কাবা নাই।

বনলতা সেন

জীবনানন্দ দাশ

হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি ; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি ; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত পাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।

চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা, মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য;
অতিদূর সমুদ্রের 'পর হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে , ' এতোদিন কোথায় ছিলেন?'
পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।

সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে, সব নদী, ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।

আবার আসিব ফিরে ---- রূপসী বাংলা

জীবনানন্দ দাশ


আবার আসিব ফিরে ধানসিড়ির তীরে — এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয় — হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে;
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঠাঁলছায়ায়;
হয়তো বা হাঁস হব — কিশোরীর — ঘুঙুর রহিবে লাল পায়,
সারা দিন কেটে যাবে কলমীর গন্ধ ভরা জলে ভেসে-ভেসে;
আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে
জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলার এ সবুজ করুণ ডাঙায়;

হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে;
হয়তো শুনিবে এক লক্ষ্মীপেচাঁ ডাকিতেছে শিমুলের ডালে;
হয়তো খইয়ের ধান ছড়াতেছে শিশু এক উঠানের ঘাসে;
রূপসা ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক শাদা ছেঁড়া পালে
ডিঙা রায় — রাঙা মেঘ সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে
দেখিবে ধবল বক: আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভিড়ে –




তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও --- রূপসী বাংলা

জীবনানন্দ দাশ


তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও — আমি এই বাংলার পারে
র’য়ে যাব; দেখিব কাঁঠালপাতা ঝরিতেছে ভোরের বাতাসে;
দেখিব খয়েরি ডানা শালিখের সন্ধ্যায় হিম হয়ে আসে
ধবল রোমের নিচে তাহার হলুদ ঠ্যাং ঘাসে অন্ধকারে
নেচে চলে-একবার — দুইবার — তারপর হঠাৎ তাহারে
বনের হিজল গাছ ডাক দিয়ে নিয়ে হৃদয়ের পাশে;
দেখিব মেয়েলি হাত সকরুণ — শাদা শাঁখা ধূসর বাতাসে
শঙ্খের মতো কাঁদে: সন্ধ্যায় দাঁড়ালে সে পুকুরের ধারে,

খইরঙা হাঁসটিরে নিয়ে যাবে যেন কোন্‌ কাহিনীর দেশে –
‘পরণ-কথা’র গন্ধ লেগে আছে যেন তার নরম শরীরে,
কল্‌মীদামের থেকে জন্মেছে সে যেন এই পুকুরের নীরে –
নীরবে পা ধোয় জলে একবার — তারপর দূরে নিরুদ্দেশে
চ’লে যায় কুয়াশায় — তবু জানি কোনোদিন পৃথিবীর ভিড়ে
হারাব না তারে আমি — সে যে আছে আমার এ বাংলার তীরে।

বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি --- রূপসী বাংলা

জীবনানন্দ দাশ

বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ
খুঁজিতে যাই না আর : অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে
চেয়ে দেখি ছাতার মতন বড়ো পাতাটির নিচে বসে আছে
ভোরের দোয়েলপাখি — চারিদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ
জাম — বট — কাঠালের — হিজলের — অশখের করে আছে চুপ;
ফণীমনসার ঝোপে শটিবনে তাহাদের ছায়া পড়িয়াছে;
মধুকর ডিঙা থেকে না জানি সে কবে চাঁদ চম্পার কাছে
এমনই হিজল — বট — তমালের নীল ছায়া বাংলার অপরূপ রূপ

দেখেছিল; বেহুলার একদিন গাঙুড়ের জলে ভেলা নিয়ে –
কৃষ্ণা দ্বাদশীর জোৎস্না যখন মরিয়া গেছে নদীর চরায় –
সোনালি ধানের পাশে অসংখ্য অশ্বত্থ বট দেখেছিল, হায়,
শ্যামার নরম গান শুনেছিলো — একদিন অমরায় গিয়ে
ছিন্ন খঞ্জনার মতো যখন সে নেচেছিলো ইন্দ্রের সভায়
বাংলার নদী মাঠ ভাঁটফুল ঘুঙুরের মতো তার কেঁদেছিলো পায়।

আকাশলীনা

জীবনানন্দ দাশ


সুরঞ্জনা, ওইখানে যেয়োনাকো তুমি,
বোলোনাকো কথা ওই যুবকের সাথে;
ফিরে এসো সুরঞ্জনাঃ
নক্ষত্রের রূপালি আগুন ভরা রাতে;


ফিরে এসো এই মাঠে , ঢেউয়ে;
ফিরে এসো হৃদয়ে আমার;
দূর থেকে দূর - আরো দূরে
যুবকের সাথে তুমি যেয়োনাকো আর।


কী কথা তাহার সাথে? -তার সাথে!
আকাশের আড়ালে আকাশে
মৃত্তিকার মত তুমি আজ:
তার প্রেম ঘাস হয়ে আসে।

সুরঞ্জনা,
তোমার হৃদয় আজ ঘাস:
বাতাসের ওপারে বাতাস
-আকাশের ওপারে আকাশ।
 

কাজলা দিদি

যতীন্দ্রমোহন বাগচী

বাঁশ-বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই,
মাগো আমার শোলক্-বলা কাজলা দিদি কই?
পুকুর ধারে লেবুর তলে,
থোকায় থোকায় জোনাই জ্বলে,
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, একলা জেগে রই,
মাগো আমার কোলের কাছে কাজলা দিদি কই?

সেদিন হতে কেন মা আর দিদিরে না ডাকো;
দিদির কথায় আঁচল দিয়ে মুখটি কেন ঢাকো?
খাবার খেতে আমি যখন
দিদি বলে ডাকি তখন,
ও-ঘর থেকে কেন মা আর দিদি আসে নাকো?
আমি ডাকি, তুমি কেন চুপটি করে থাকো?

বল্ মা দিদি কোথায় গেছে, আসবে আবার কবে?
কাল যে আমার নতুন ঘরে পুতুল বিয়ে হবে!
দিদির মত ফাঁকি দিয়ে
আমিও যদি লুকাই গিয়ে
তুমি তখন একলা ঘরে কেমন ক'রে রবে?
আমিও নাই---দিদিও নাই---কেমন মজা হবে!

ভূঁই-চাঁপাতে ভরে গেছে শিউলী গাছের তল,
মাড়াস্ নে মা পুকুর থেকে আনবি যখন জল |
ডালিম গাছের ফাঁকে ফাঁকে
বুলবুলিটা লুকিয়ে থাকে,
উড়িয়ে তুমি দিও না মা ছিঁড়তে গিয়ে ফল,
দিদি যখন শুনবে এসে বলবি কি মা বল্ |

বাঁশ-বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই,
এমন সময় মাগো আমার কাজলা দিদি কই?
লেবুর তলে পুকুর পাড়ে
ঝিঁঝিঁ ডাকে ঝোপে ঝাড়ে,
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, তাইতো জেগে রই,---
রাত্রি হোল মাগো, আমার কাজলা দিদি কই?

হঠাৎ দেখা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা,
ভাবি নি সন্তব হবে কোনোদিন৷

আগে ওকে বারবার দেখেছি
লাল রঙের শাড়িতে-

ডালিম ফুলের মতো রাঙা,
আজ পরেছে কালো রেশমের কাপড়,
আঁচল তুলেছে মাথায়
দোলন-চাঁপার মতো চিকন-গৌর মুখখানি ঘিরে৷
মনে হল, কালো রঙে একটা গভীর দূরত্ব,
ঘনিয়ে নিয়েছে নিজের চার দিকে,
যে দূরত্ব, সর্ষেক্ষেতের শেষ সীমানায়
শালবনের নীলাঞ্জনে৷
থমকে গেল আমার সমস্ত মনটা,
চেনা লোককে দেখলাম অচেনার গাম্ভীর্যে৷

হঠাত্ খবরের কাগজ ফেলে দিয়ে
আমাকে করলে নমস্কার৷
সমাজবিধির পথ গেল খুলে,
আলাপ করলেন শুরু-
'কেমন আছ', কেমন চলছে সংসার'
ইত্যাদি৷
সে রইল জানলার বাইরের দিকে চেয়ে
যেন কাছের-দিনের-ছোঁয়াচ-পার-হওয়া চাহনিতে৷
দিলে অত্যন্ত ছোটো দুটো-একটা জবাব,
কোনোটা বা দিলেই না৷
বুঝিয়ে দিলে হাতের অস্থিরতায়-
কেন এ-সব কথা,
আর চেয়ে অনেক ভালো চুপ করে থাকা৷

আমি ছিলেম অন্য বেঞ্চিতে ওর সাথিদের সঙ্গে৷
এক সময় আঙুল নেড়ে জানালে কাছে আসতে৷
মন এ হল সাহস কম নয়-
বসলুম ওর এক-বেঞ্চিতে৷
গাড়ির আওয়াজের আড়ালে
বললে মৃদুস্বরে,
'কিছু মনে কোরো না,
সময় কোথা সময় নষ্ট করবার৷
আমাকে নামতে হবে পরের স্টেশনেই
দূরে যাবে তুমি,
দেখা হবে না আর কোনোদিনই৷
তাই যে প্রশ্নটার জবাব এতকাল থেমে আছে,
শুনব তোমার মুখে৷
সত্য করে বলবে তো?
আমি বললেম, 'বলব৷'
বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়েই শুধোল,
'আমাদের গেছে যে দিন
একেবারেই কি গেছে-
কিছুই কি নেই বাকি?'

একটুকু রইলেম চুপ করে,
তারপর বললেম,
'রাতের সব তারাই আছে
দিনের আলোর গহ্ববরে৷'

খটকা লাগল, কী জানি বানিয়ে বললেন নাকি৷
ও বললে, 'থাক্, এখন অ যাও ও দিকে৷'
সবাই নেমে গেল পরের স্টেশনে৷
আমি চললেম একা৷৷

সোনার তরী

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।
কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।
রাশি রাশি ভারা ভারা
ধান-কাটা হল সারা,
ভরা নদী ক্ষুরধারা
খরপরশা--
কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা॥


একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা---
চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।
পরপারে দেখি আঁকা
তরুছায়ামসী-মাখা
গ্রামখানি মেঘে ঢাকা
প্রভাতবেলা---
এপারেতে ছোটো খেত, আমি একেলা॥


গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে!
দেখে যেন মনে হয়, চিনি উহারে।
ভরা পালে চলে যায়,
কোনো দিকে নাহি চায়,
ঢেউগুলি নিরুপায়
ভাঙে দু ধারে---
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে॥


ওগো, তুমি কোথা যাও কোন্‌ বিদেশে?
বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে।
যেয়ো যেথা যেতে চাও,
যারে খুশি তারে দাও---
শুধু তুমি নিয়ে যাও
ক্ষণিক হেসে
আমার সোনার ধান কূলেতে এসে॥


যত চাও তত লও তরণী-পরে।
আর আছে?--- আর নাই, দিয়েছি ভরে॥
এতকাল নদীকূলে
যাহা লয়ে ছিনু ভুলে
সকলি দিলাম তুলে
থরে বিথরে---
এখন আমারে লহো করুণা ক'রে॥


ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই, ছোটো সে তরী
আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।
শ্রাবণগগন ঘিরে
ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে,
শূন্য নদীর তীরে
রহিনু পড়ি---
যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী॥

আমার সোনার বাংলা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি॥
ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,
মরি হায়, হায় রে—
ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি॥

কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো—
কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে।
মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো,
মরি হায়, হায় রে—
মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি॥

তোমার এই খেলাঘরে শিশুকাল কাটিলে রে,
তোমারি ধুলামাটি অঙ্গে মাখি ধন্য জীবন মানি।
তুই দিন ফুরালে সন্ধ্যাকালে কী দীপ জ্বালিস ঘরে,
মরি হায়, হায় রে—
তখন খেলাধুলা সকল ফেলে, ও মা, তোমার কোলে ছুটে আসি॥

ধেনু-চরা তোমার মাঠে, পারে যাবার খেয়াঘাটে,
সারা দিন পাখি-ডাকা ছায়ায়-ঢাকা তোমার পল্লীবাটে,
তোমার ধানে-ভরা আঙিনাতে জীবনের দিন কাটে,
মরি হায়, হায় রে—
ও মা, আমার যে ভাই তারা সবাই, ও মা, তোমার রাখাল তোমার চাষি॥

যদি ভালোবাসা পাই

রফিক আজাদ

যদি ভালোবাসা পাই আবার শুধরে নেবো
জীবনের ভুলগুলি;
যদি ভালোবাসা পাই ব্যাপক দীর্ঘ পথে
তুলে নেবো ঝোলাঝুলি
যদি ভালোবাসা পাই শীতের রাতের শেষে
মখমল দিন পাবো
যদি ভালোবাসা পাই পাহাড় ডিঙ্গাবো আর
সমুদ্র সাঁতরাবো
যদি ভালোবাসা পাই আমার আকাশ হবে
দ্রুত শরতের নীল
যদি ভালোবাসা পাই জীবনে আমিও পাবো
মধ্য অন্ত্য মিল।
যদি ভালোবাসা পাই আবার শুধরে নেবো
জীবনের ভুলগুলি
যদি ভালোবাসা পাই শিল্প-দীর্ঘ পথে
বয়ে যাবো কাঁথাগুলি ।

তোমাকে চাই

সুমন চট্টোপাধ্যায়

প্রথমত, আমি তোমাকে চাই
দ্বিতীয়ত, আমি তোমাকে চাই
তৃতীয়ত, আমি তোমাকে চাই
শেষ পর্যন্ত তোমাকে চাই।।
নিঝুম অন্ধকারে তোমাকে চাই
রাতভোর হলে আমি তোমাকে চাই
সকালের কৈশোরে তোমাকে চাই
সন্ধের অবকাশে তোমাকে চাই।।
বৈশাখী ঝড়ে আমি তোমাকে চাই
আষাঢ়ের মেঘে আমি তোমাকে চাই
শ্রাবণে শ্রাবণে আমি তোমাকে চাই
অকালবোধনে আমি তোমাকে চাই।।
কবেকার কলকাতা শহরের পথে
পুরোনো নতুন মুখ ঘরে ইমারতে
অগুন্তি মানুষের ক্লান্ত মিছিলে
অচেনা ছুটির ছোঁয়া তুমি এনে দিলে
নাগরিক ক্লান্তিতে তোমাকে চাই
এক ফোঁটা শান্তিতে তোমাকে চাই
বহুদূর হেঁটে এসে তোমাকে চাই
এ জীবন ভালোবেসে তোমাকে চাই।।
চৌরাস্তার মোড়ে পার্কে দোকানে
শহরে গঞ্জে গ্রামে এখানে ওখানে
স্টেশন টার্মিনাস ঘাটে বন্দরে
অচেনা ড্রয়িংরুমে চেনা অন্দরে
বালিশ তোশক কাঁথা পুরোনো চাদরে
ঠান্ডা শীতের রাতে লেপের আদরে
কড়িকাঠে চৌকাঠে মাদুরে পাপোশে
হাসি রাগ অভিমানে ঝগড়া আপোসে
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই, তোমাকে চাই, তোমাকে চাই
এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই
ডাইনে ও বাঁয়ে আমি তোমাকে চাই
দেখা না দেখায় আমি তোমাকে চাই
না-বলা কথায় আমি তোমাকে চাই।।
শীর্ষেন্দুর কোন নতুন নভেলে
হঠাৎ পড়তে বসা আবোলতাবোলে
অবোধ্য কবিতায় ঠুংরি খেয়ালে
স্লোগানে স্লোগানে ঢাকা দেয়ালে দেয়ালে।।
সলিল চৌধুরীর ফেলে আসা গানে
চৌরাশিয়ার বাঁশি মুখরিত প্রাণে
ভুলে যাওয়া হিমাংশু দত্তর সুরে
কোন্ কবেকার অনুরোধের আসরে
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই, তোমাকে চাই, তোমাকে চাই
অনুরোধে মিনতিতে তোমাকে চাই
বেদনার আর্তিতে তোমাকে চাই
দাবীদাওয়া চাহিদায় তোমাকে চাই
লজ্জাদ্বিধায় আমি তোমাকে চাই
অধিকার বুঝে নেওয়া প্রখর দাবীতে
সারারাত জেগে আঁকা লড়াকু ছবিতে
ছিপছিপে কবিতার ছন্দে ভাষায়
গদ্যের যুক্তিতে বাঁচার আশায়
শ্রেণীহীন সমাজের চির বাসনায়
দিনবদলের খিদে ভরা চেতনায়
দ্বিধাদ্বন্দের দিন ঘোচার স্বপ্নে
সাম্যবাদের গান ঘুমে জাগরণে
বিক্ষোভে বিপ্লবে তোমাকে চাই
ভীষণ অসম্ভবে তোমাকে চাই
শান্তি অশান্তিতে তোমাকে চাই
এই বিভ্রান্তিতে তোমাকে চাই।।

ষোলা আনাই মিছে

সুকুমার রায়

বিদ্যেবোঝাই বাবুমশাই চড়ি সখের বোটে,
মাঝিরে কন, ''বলতে পারিস সূর্যি কেন ওঠে?
চাঁদটা কেন বাড়ে কমে? জোয়ার কেন আসে?''
বৃদ্ধ মাঝি অবাক হয়ে ফ্যাল্ফ্যালিয়ে হাসে।
বাবু বলেন, ''সারা জীবন মরলিরে তুই খাটি,
জ্ঞান বিনা তোর জীবনটা যে চারি আনাই মাটি।''

খানিক বাদে কহেন বাবু, ''বলতো দেখি ভেবে
নদীর ধারা কেমনে আসে পাহাড় থেকে নেবে?
বলতো কেন লবণপোরা সাগর ভরা পানি?''
মাঝি সে কয়, ''আরে মশাই অত কি আর জানি?''
বাবু বলেন, ''এই বয়সে জানিসনেও তা কি
জীবনটা তোর নেহাৎ খেলো, অষ্ট আনাই ফাঁকি!''

আবার ভেবে কহেন বাবু, '' বলতো ওরে বুড়ো,
কেন এমন নীল দেখা যায় আকাশের ঐ চুড়ো?
বলতো দেখি সূর্য চাঁদে গ্রহণ লাগে কেন?''
বৃদ্ধ বলে, ''আমায় কেন লজ্জা দেছেন হেন?''
বাবু বলেন, ''বলব কি আর বলব তোরে কি তা,-
দেখছি এখন জীবনটা তোর বারো আনাই বৃথা।''

খানিক বাদে ঝড় উঠেছে, ঢেউ উঠেছে ফুলে,
বাবু দেখেন, নৌকাখানি ডুবলো বুঝি দুলে!
মাঝিরে কন, '' একি আপদ! ওরে ও ভাই মাঝি,
ডুবলো নাকি নৌকা এবার? মরব নাকি আজি?''
মাঝি শুধায়, ''সাঁতার জানো?''- মাথা নাড়েন বাবু,
মূর্খ মাঝি বলে, ''মশাই, এখন কেন কাবু?
বাঁচলে শেষে আমার কথা হিসেব করো পিছে,
তোমার দেখি জীবন খানা ষোল আনাই মিছে!''

নন্দলাল

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়


নন্দলাল তো একদা একটা করিল ভীষণ পণ -
স্বদেশের তরে, যা করেই হোক, রাখিবেই সে জীবন।
সকলে বলিল, 'আ-হা-হা কর কি, কর কি, নন্দলাল?'
নন্দ বলিল, 'বসিয়া বসিয়া রহিব কি চিরকাল?
আমি না করিলে কে করিবে আর উদ্ধার এই দেশ?'
তখন সকলে বলিল- 'বাহবা বাহবা বাহবা বেশ।'

নন্দর ভাই কলেরায় মরে, দেখিবে তারে কেবা!
সকলে বলিল, 'যাও না নন্দ, করো না ভায়ের সেবা'
নন্দ বলিল, ভায়ের জন্য জীবনটা যদি দিই-
না হয় দিলাম, -কিন্তু অভাগা দেশের হইবে কি?
বাঁচাটা আমার অতি দরকার, ভেবে দেখি চারিদিক'
তখন সকলে বলিল- 'হাঁ হাঁ হাঁ, তা বটে, তা বটে, ঠিক।'

নন্দ একদা হঠাৎ একটা কাগজ করিল বাহির,
গালি দিয়া সবে গদ্যে, পদ্যে বিদ্যা করিল জাহির;
পড়িল ধন্য দেশের জন্য নন্দ খাটিয়া খুন;
লেখে যত তার দ্বিগুণ ঘুমায়, খায় তার দশ গুণ;
খাইতে ধরিল লুচি ও ছোকা ও সন্দেশ থাল থাল,
তখন সকলে বলিল- 'বাহবা বাহবা, বাহবা নন্দলাল।'

নন্দ একদা কাগজেতে এক সাহেবকে দেয় গালি;
সাহেব আসিয়া গলাটি তাহার টিপিয়া ধরিল খালি;
নন্দ বলিল, 'আ-হা-হা! কর কি, কর কি! ছাড় না ছাই,
কি হবে দেশের, গলাটিপুনিতে আমি যদি মারা যাই?
বলো কি' বিঘৎ নাকে দিব খত যা বলো করিব তাহা।'
তখন সকলে বলিল – 'বাহবা বাহবা বাহবা বাহা!'

নন্দ বাড়ির হ'ত না বাহির, কোথা কি ঘটে কি জানি;
চড়িত না গাড়ি, কি জানি কখন উল্টায় গাড়িখানি,
নৌকা ফি-সন ডুবিছে ভীষণ, রেলে 'কলিসন' হয়;
হাঁটতে সর্প, কুকুর আর গাড়ি-চাপা পড়া ভয়,
তাই শুয়ে শুয়ে, কষ্টে বাঁচিয়ে রহিল নন্দলাল
সকলে বলিল- 'ভ্যালা রে নন্দ, বেঁচে থাক্ চিরকাল।'

কাজের ছেলে

যোগীন্দ্রনাথ সরকার

দাদ্খানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,
দু'টা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিম-ভরা কৈ।'
পথে হেঁটে চলি, মনে মনে বলি, পাছে হয় ভুল;
ভুল যদি হয়, মা তবে নিশ্চয়, ছিঁড়ে দেবে চুল।

'দাদ্খানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,
দু'টা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিম-ভরা কৈ।'

বাহবা বাহবা- ভোলা ভূতো হাবা খেলিছে তো বেশ।
দেখিব খেলাতে, কে হারে কে জেতে, কেনা হলে শেষ।
'দাদ্খানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,
ডিম ভরা বেল, দু'টা পাকা তেল, সরিষার কৈ।'

ওই তো ওখানে ঘুড়ি ধরে টানে, ঘোষেদের ননী:
আমি যদি পাই, তা হলে উড়াই আকাশে এখনি।
দাদখানি তেল, ডিম-ভরা বেল, দু'টা পাকা দৈ,
সরিষার চাল, চিনি-পাতা ডাল, মুসুরির কৈ!

এসেছি দোকানে-কিনি এই খানে, যদি কিছু পাই;
মা যাহা বলেছে, ঠিক মনে আছে, তাতে ভুল নাই!
দাদখানি বেল, মুসুরির তেল, সরিষার কৈ,
চিনি-পাতা চাল, দু'টা পাকা ডাল, ডিম-ভরা দৈ।

বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০১১

মাইক্রোপ্রসেসর ক্লাস ; TK mam ও আমরা কয়েকজন আবাল

শিক্ষিকা ক্লাসে আসলেন। শিক্ষার্থীরা খাতা-কলম হাতে ধরে রেডি, হুইসেলের অপেক্ষায় সবাই। শিক্ষিকা অতি যত্নসহকারে হোয়াইট বোর্ডটির উপর তার হাতে থাকা রিমুভারটি ঘষলেন। বোর্ড এখন ফকফকা। লিখা শুরু......


8086 প্রসেসরের পিন এর কাজ :
.............
.................
....................
..........................
....................................

8086 প্রসেসরের Interrupt :

.............
.................
....................
..........................
....................................

Digital Interfacing :
.............
.................
....................
..............................................


উফফফ......এত্ত কিছু কি একদিনে শেখা যায় !!!!!!!

এবার শিক্ষিকা ঘুরলেন। বললেন, এই গুলা ত বুঝছ, তাই না। শিক্ষার্থীরা যেনো সম্মতিসূচক মাথা নাড়ালেন। শিক্ষিকা আবার ঘুরলেন এবং তার হাতে থাকা কালো দাগ অঙ্কনকারী বস্তুটিকে দিয়ে বোর্ড এর উপর সাইক্লোন শুরু করে দিলেন। শিক্ষার্থীরাও ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট নিয়ে ম্যাডামের সাথে পাল্লা দিতে নেমে পড়লো।

মিনিট ৩০ এর পর, সব শান্ত হলো। সবাই ক্লান্ত, কিন্তু মুখে প্রশান্তির হাসি।

শিক্ষিকা হাসছেন কারণ তিনি এত্তগুলো বিষয় একদিনে শিখিয়ে ফেললেন।

আর শিক্ষার্থী হাসছেন, কারণ পরীক্ষার খাতায় প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য এখন আর তাকে বইয়ে দেওয়া প্রতিটি প্রসেসর এর ডেসক্রিপশন পড়তে হবে না, কারণ ম্যাডাম তো তার শিক্ষাজীবনে করা নোটখাতা থেকে দেখে দেখে পয়েন্ট আকারে প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখে দিয়েছেন। আর কি লাগে !!!

কিন্তু, একটি হাবাগোবা এবং পরীক্ষাতে ৬০ এর মধ্যে বার বার ৩০-৩৯ পাওয়া বেকুব ছাত্র (আমি) মাথা চুলকায়ে ভাবলো, আজ কি রাস্তা ভুল করছি নাকি !! আমি তো ইঞ্জিনিয়ারিং এর স্টুডেন্ট ছিলাম, আমারতো ইঞ্জিনিয়ারিং এর ক্লাস করার কথা ছিলো !! নাহ, হিসাব তো মিলছে না।

যাই হোক, শিক্ষিকা ক্লাস টেস্টের শিডিউল দিয়ে  চলে গেলেন।

আর শিক্ষার্থীরা গুনগুন করতে থাকলো, ইঞ্জিনিয়ার হওয়া কি এতই সহজ। কত পড়তে হয় !! কত প্রশ্ন, কত উত্তর !!

এবার সেই বেকুব ছেলেটির সাথে অন্যদের মতের মিল হলো, কারণ বেকুব ছেলেটিও মনে মনে এই কথাগুলোই আওড়াতে আওড়াতে ক্লাস থেকে বের হয়ে একটু eye exercise করে বাড়ির পথে রওনা হলো। আর যাবার পথে বললো, "এ সবই আমার কপাল। আমি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তাছি।"
.


নিতীকথা :   ইঞ্জিনিয়ার হবার জন্য শুধু শিট পরলে ই হই না। বই ও পরতে হই ।

মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই, ২০১১

ছাড়পত্র

সুকান্ত ভট্টাচার্য



যে শিশু ভূমিষ্ঠ হল আজ রাত্রে
তার মুখে খবর পেলুম:
সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক,
নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার
জন্মমাত্র সুতীব্র চীৎকারে।
খর্বদেহ নিঃসহায়, তবু তার মুষ্টিবদ্ধ হাত
উত্তোলিত, উদ্ভাসিত
কী এক দুর্বোধ্য প্রতিজ্ঞায়।
সে ভাষা বোঝে না কেউ,
কেউ হাসে, কেউ করে মৃদু তিরস্কার।
আমি কিন্তু মনে মনে বুঝেছি সে ভাষা
পেয়েছি নতুন চিঠি আসন্ন যুগের-
পরিচয়-পত্র পড়ি ভূমিষ্ঠ শিশুর
অস্পষ্ট কুয়াশাভরা চোখে।
এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান;
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে।
চলে যেতে হবে আমাদের।
চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ-শিশুর বাসযোগ্য ক'রে যাব আমি-
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
অবশেষে সব কাজ সেরে,
আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুকে
করে যাব আশীর্বাদ,

তারপর হব ইতিহাস।।

রানার

সুকান্ত ভট্টাচার্য



রানার ছুটেছে তাই ঝুম ঝুম ঘণ্টা বাজছে রাতে
রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে,
রানার চলেছে, রানার !
রাত্রির পথে পথে চলে কোনো নিষেধ জানে না মানার।
দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছোটে রানার-
কাজ নিয়েছে সে নতুন খবর আনার।

রানার ! রানার !
জানা-অজানার
বোঝা আজ তার কাঁধে,
বোঝাই জাহাজ চলেছে চিঠি আর সংবাদে;
রানার চলেছে, বুঝি ভোর হয় হয়,
আরো জোরে, আরো জোরে, এ রানার দূর্বার দূর্জয়।
তার জীবনের স্বপ্নের মত পিছে সরে যায় বন,
আরো পথ, আরো পথ-বুঝি হয় লাল ও পূর্ব কোণ।
অবাক রাতের তারারা আকাশে মিটমিট করে চায়;
কেমন ক'রে এ রানার সবেগে হরিণের মত ধায় !
কত গ্রাম, কত পথ যায় স'রে স'রে
শহরে রানার যাবেই পৌঁছে ভোরে;
হাতে লণ্ঠন করে ঠনঠন্ জোনাকিরা দেয় আলো
মাভৈঃ রানার ! এখনো রাতের কালো।

এমনি ক'রেই জীবনের বহু বছরকে পিছু ফেলে,
পৃথিবীর বোঝা ক্ষুধিত রানার পৌঁছে দিয়েছে 'মেলে'।
ক্লান্তশ্বাস ছুঁয়েছে আকাশ, মাটি ভিজে গেছে ঘামে
জীবনের সব রাত্রিকে ওরা কিনেছে অল্প দামে।
অনেক দুঃখ, বহু বেদনায়, অভিমানে অনুরাগে
ঘরে তার প্রিয়া একা শয্যায় বিনিদ্র রাত জাগে।
রানার ! রানার !
এ বোঝা টানার দিন কবে শেষ হবে ?
রাত শেষ হয়ে সূর্য উঠবে কবে ?
ঘরেতে অভাব; পৃথিবীটা তাই মনে হয় কালো ধোঁয়া,
পিঠেতে টাকার বোঝা, তবু এই টাকাকে যাবে না ছোঁয়া,
রাত নির্জন, পথে কত ভয়, তবুও রানার ছোটে,
দস্যুর ভয়, তারো চেয়ে ভয় কখন সূর্য ওঠে
কত চিঠি লেখে লোকে-
কত সুখে, প্রেমে, আবেগে, স্মৃতিতে, কত দুঃখে ও শোকে
এর দুঃখের চিঠি পড়বে না জানি কেউ কোনো দিনও,
এর জীবনের দুঃখ কেমন, জানবে পথের তৃণ
এর দুঃখের কথা জানবে না কেউ শহরে ও গ্রামে,
এর কথা ঢাকা পড়ে থাকবেই পাঠাবে সহানুভূতির খামে-
রানার ! রানার ! কী হবে এ বোঝা ব'য়ে।
কী হবে ক্ষুধার ক্লান্তিকে ক্ষ'য়ে ক্ষ'য়ে ?
রানার ! রানার ! ভোর তো হয়েছে- আকাশ হয়েছে লাল,
আলোর স্পর্শে কবে কেটে যাবে এই দুঃখের কাল ?
রানার ! গ্রামের রানার !
সময় হয়েছে নতুন খবর আনার;
শপথের চিঠি নিয়ে চল আজ
ভীরুতা পিছনে ফেলে-
পৌঁছে দাও এ নতুন খবর
অগ্রগতির 'মেলে',
দেখা দেবে বুঝি প্রভাত এখুনি-
নেই, দেরী নেই আর,
ছুটে চলো, ছুটে চলো, আরো বেগে
দুর্দম, হে রানার।।

রানার ছুটেছে তাই ঝুম ঝুম ঘণ্টা বাজছে রাতে
রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে,
রানার চলেছে, রানার !
রাত্রির পথে পথে চলে কোনো নিষেধ জানে না মানার।
দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছোটে রানার-
কাজ নিয়েছে সে নতুন খবর আনার।

রানার ! রানার !
জানা-অজানার
বোঝা আজ তার কাঁধে,
বোঝাই জাহাজ চলেছে চিঠি আর সংবাদে;
রানার চলেছে, বুঝি ভোর হয় হয়,
আরো জোরে, আরো জোরে, এ রানার দূর্বার দূর্জয়।
তার জীবনের স্বপ্নের মত পিছে সরে যায় বন,
আরো পথ, আরো পথ-বুঝি হয় লাল ও পূর্ব কোণ।
অবাক রাতের তারারা আকাশে মিটমিট করে চায়;
কেমন ক'রে এ রানার সবেগে হরিণের ম ধায় !
কত গ্রাম, কত পথ যায় স'রে স'রে
শহরে রানার যাবেই পৌঁছে ভোরে;
হাতে লণ্ঠন করে ঠনঠন্ জোনাকিরা দেয় আলো
মাভৈঃ রানার ! এখনো রাতের কালো।

এমনি ক'রেই জীবনের বহু বছরকে পিছু ফেলে,
পৃথিবীর বোঝা ক্ষুধিত রানার পৌঁছে দিয়েছে 'মেলে'।
ক্লান্তশ্বাস ছুঁয়েছে আকাশ, মাটি ভিজে গেছে ঘামে
জীবনের সব রাত্রিকে ওরা কিনেছে অল্প দামে।
অনেক দুঃখ, বহু বেদনায়, অভিমানে অনুরাগে
ঘরে তার প্রিয়া একা শয্যায় বিনিদ্র রাত জাগে।
রানার ! রানার !
এ বোঝা টানার দিন কবে শেষ হবে ?
রাত শেষ হয়ে সূর্য উঠবে কবে ?
ঘরেতে অভাব; পৃথিবীটা তাই মনে হয় কালো ধোঁয়া,
পিঠেতে টাকার বোঝা, তবু এই টাকাকে যাবে না ছোঁয়া,
রাত নির্জন, পথে কত ভয়, তবুও রানার ছোটে,
দস্যুর ভয়, তারো চেয়ে ভয় কখন সূর্য ওঠে
কত চিঠি লেখে লোকে-
কত সুখে, প্রেমে, আবেগে, স্মৃতিতে, কত দুঃখে ও শোকে
এর দুঃখের চিঠি পড়বে না জানি কেউ কোনো দিনও,
এর জীবনের দুঃখ কেমন, জানবে পথের তৃণ
এর দুঃখের কথা জানবে না কেউ শহরে ও গ্রামে,
এর কথা ঢাকা পড়ে থাকবেই পাঠাবে সহানুভূতির খামে-
রানার ! রানার ! কী হবে এ বোঝা ব'য়ে।
কী হবে ক্ষুধার ক্লান্তিকে ক্ষ'য়ে ক্ষ'য়ে ?
রানার ! রানার ! ভোর তো হয়েছে- আকাশ হয়েছে লাল,
আলোর স্পর্শে কবে কেটে যাবে এই দুঃখের কাল ?
রানার ! গ্রামের রানার !
সময় হয়েছে নতুন খবর আনার;
শপথের চিঠি নিয়ে চল আজ
ভীরুতা পিছনে ফেলে-
পৌঁছে দাও এ নতুন খবর
অগ্রগতির 'মেলে',
দেখা দেবে বুঝি প্রভাত এখুনি-
নেই, দেরী নেই আর,
ছুটে চলো, ছুটে চলো, আরো বেগে
দুর্দম, হে রানার।।

কষ্ট নেবে কষ্ট

হেলাল হাফিজ


কষ্ট নেবে কষ্ট
হরেক রকম কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট।

লাল কষ্ট নীল কষ্ট কাঁচা হলুদ রঙের কষ্ট
পাথর চাপা সবুজ ঘাসের সাদা কষ্ট,
আলোর মাঝে কালোর কষ্ট
মাল্টি কালার কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট।

ঘরের কষ্ট পরের কষ্ট পাখি এবং পাতার কষ্ট
দাড়ির কষ্ট
চোখের বুকের নখের কষ্ট,
একটি মানুষ খুব নীরবে নষ্ট হবার কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট।

প্রেমের কষ্ট ঘৃণার কষ্ট নদী এবং নারীর কষ্ট
অনাদর ও অবহেলার তুমুল কষ্ট,
ভুল রমণী ভালোবাসার
ভুল নেতাদের জনসভার
তাসের খেলায় দুইটি জোকার নষ্ট হবার কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট।

দিনের কষ্ট রাতের কষ্ট
পথের এবং পায়ের কষ্ট
অসাধারণ করুণ চারু কষ্ট ফেরীঅলার কষ্ট
কষ্ট নেবে কষ্ট।

আর কে দেবে আমি ছাড়া
আসল শোভন কষ্ট,
কার পুড়েছে জন্ম থেকে কপাল এমন
আমার মত ক’জনের আর
সব হয়েছে নষ্ট,
আর কে দেবে আমার মতো হৃষ্টপুষ্ট কষ্ট

ইচ্ছে ছিলো

হেলাল হাফিজ



ইচ্ছে ছিলো তোমাকে সম্রাজ্ঞী করে সাম্রাজ্য বাড়াবো
ইচ্ছে ছিলো তোমাকেই সুখের পতাকা করে
শান্তির কপোত করে হৃদয়ে উড়াবো।

ইচ্ছে ছিলো সুনিপূণ মেকআপ-ম্যানের মতো
সূর্যালোকে কেবল সাজাবো তিমিরের সারাবেলা
পৌরুষের প্রেম দিয়ে তোমাকে বাজাবো, আহা তুমুল বাজাবো।

ইচ্ছে ছিলো নদীর বক্ষ থেকে জলে জলে শব্দ তুলে
রাখবো তোমার লাজুক চঞ্চুতে,
জন্মাবধি আমার শীতল চোখ
তাপ নেবে তোমার দু’চোখে।

ইচ্ছে ছিল রাজা হবো
তোমাকে সাম্রাজ্ঞী করে সাম্রাজ্য বাড়াবো,
আজ দেখি রাজ্য আছে
রাজা আছে
ইচ্ছে আছে,
শুধু তুমি অন্য ঘরে।

কেউ কথা রাখেনি

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

 


কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো কেউ কথা রাখেনি
ছেলেবেলায় এক বোষ্টুমি তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিলো
শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে
তারপর কত চন্দ্রভুক অমবস্যা এসে চলে গেল, কিন্তু সেই বোষ্টুমি আর এলো না
পঁচিশ বছর প্রতীক্ষায় আছি ।

মামাবাড়ির মাঝি নাদের আলী বলেছিল, বড় হও দাদাঠাকুর
তোমাকে আমি তিন প্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবো
সেখানে পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর খেলা করে !
নাদের আলি, আমি আর কত বড় হবো ? আমার মাথা এই ঘরের ছাদ
ফুঁরে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর তুমি আমায় তিন প্রহরের বিল দেখাবে ?

একটাও রয়্যাল গুলি কিনতে পারিনি কখনো
লাঠি-লজেন্স দেখিয়ে দেখিয়ে চুষেছে লস্কর বাড়ির ছেলেরা
ভিখারীর মতন চৌধুরীদের গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছি ভেতরে রাস উৎসব
অবিরল রঙ্গের ধারার মধ্যে সুবর্ণ কঙ্কণ পড়া ফর্সা রমণীরা কতরকম আমোদে হেসেছে
আমার দিকে তারা ফিরেও চায়নি !
বাবা আমার কাঁধ ছুঁয়ে বলেছিলেন, দেখিস, একদিন আমরাও...
বাবা এখন অন্ধ, আমাদের দেখা হয়নি কিছুই
সেই রয়্যাল গুলি, সেই লাঠি-লজেন্স, সেই রাস উৎসব
আমায় কেউ ফিরিয়ে দেবে না !

বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুণা বলেছিল,
যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালবাসবে
সেদিন আমার বুকেও এরকম আতরের গন্ধ হবে !
ভালবাসার জন্য আমি হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়েছি
দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড়
বিশ্ব সংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮ নীলপদ্ম
তবু কথা রাখেনি বরুণা, এখন তার বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ
এখনো সে যে কোন নারী !
কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনা !

মাগো, ওরা বলে


আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ 





“কুমড়ো ফুলে ফুলে
নুয়ে পরেছে লতাটা,
সজনে ডাঁটায়
ভরে গেছে গাছটা,
আর আমি
ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছি।
খোকা তুই কবে আসবি ?
কবে ছুটি?”
চিঠিটা তার পকেটে ছিল
ছেঁড়া আর রক্তে ভেজা।

“মাগো, ওরা বলে
সবার কথা কেড়ে নেবে।
তোমার কোলে শুয়ে
গল্প শুনতে দেবে না।
বলো, মা,
তাই কি হয়?
তাইতো আমার দেরি হচ্ছে।
তোমার জন্যে
কথার ঝুরি নিয়ে
তবেই না বাড়ি ফিরবো।

ল‍হ্মী মা,
রাগ ক’রো না,
মাত্রতো আর ক’টা দিন।”
“পাগল ছেলে,”
মা পড়ে আর হাসে,
“তোর ওপরে রাগ ক’রতে পারি !”
নারিকেলের চিড়ে কোটে,
উড়কি ধানের মুড়কি ভাজে,
এটা-সেটা
আর কত কী !
তার খোকা যে বাড়ি ফিরবে
ক্লান্ত খোকা।
কুমড়ো ফুল
শুকিয়ে গেছে,
ঝ'রে পড়েছে ডাঁটা,
পুঁই লতাটা নেতানো
“খোকা এলি ?”
ঝাপসা চোখে মা তাকায়
উঠানে উঠানে
যেখানে খোকার শব
শকুনীরা ব্যবচ্ছেদ করে।

এখন
মা’র চোখে চৈত্রের রোদ
পুরিয়ে দেয় শকুনীদের।
তারপর
দাওয়ায় ব’সে
মা আবার ধান ভানে,
বিন্নি ধানের খই ভাজে,
খোকা তার
কখন আসে কখন আসে!

এখন
মা’র চোখে শিশির-ভোর
স্নেহের রোদে ভিটে ভ’রেছে।

বাতাসে লাশের গন্ধ

রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ





আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই
আজো আমি মাটিতে মৃত্যূর নগ্ননৃত্য দেখি,
ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে…
এ দেশ কি ভুলে গেছে সেই দু:স্বপ্নের রাত, সেই রক্তাক্ত সময় ?
বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসে
মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ।
এই রক্তমাখা মটির ললাট ছুঁয়ে একদিন যারা বুক বেঁধেছিলো।
জীর্ণ জীবনের পুঁজে তারা খুঁজে নেয় নিষিদ্ধ আধাঁর,
আজ তারা আলোহীন খাঁচা ভালোবেসে জেগে থাকে রাত্রির গুহায়।
এ যেন নষ্ট জন্মের লজ্জায় আরষ্ট কুমারী জননী,
স্বাধীনতা – একি হবে নষ্ট জন্ম ?
একি তবে পিতাহীন জননীর লজ্জার ফসল ?

জাতির পতাকা খামচে ধরেছে আজ পুরোনো শকুন।

বাতাশে লাশের গন্ধ
নিয়ন আলোয় তবু নর্তকীর দেহে দুলে মাংসের তুফান।
মাটিতে রক্তের দাগ -
চালের গুদামে তবু জমা হয় অনাহারী মানুষের হাড়
এ চোখে ঘুম আসেনা। সারারাত আমার ঘুম আসেনা-
তন্দ্রার ভেতরে আমি শুনি ধর্ষিতার করুণ চিৎকার,
নদীতে পানার মতো ভেসে থাকা মানুষের পচা লাশ
মুন্ডহীন বালিকার কুকুরে খাওয়া বিভৎস্য শরীর
ভেসে ওঠে চোখের ভেতরে। আমি ঘুমুতে পারিনা, আমি
ঘুমুতে পারিনা…
রক্তের কাফনে মোড়া – কুকুরে খেয়েছে যারে, শকুনে খেয়েছে যারে
সে আমার ভাই, সে আমার মা, সে আমার প্রিয়তম পিতা।
স্বাধীনতা, সে আমার – স্বজন, হারিয়ে পাওয়া একমাত্র স্বজন -
স্বাধীনতা – আমার প্রিয় মানুষের রক্তে কেনা অমূল্য ফসল।
ধর্ষিতা বোনের শাড়ী ওই আমার রক্তাক্ত জাতির পতাকা।

পেপাল এবং আ্যালার্টপে থেকে সরাসরি মোবাইলে টাকা আনার পদ্ধতি

ইন্টারনেটে অর্থ লেনদেনের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সহজ পদ্ধতি হচ্ছে “পেপাল”। তবে দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য হচ্ছে বাংলাদেশে এর কোন সার্ভিস নেই এবং কবে নাগাদ এটি চালু হবে তা কেউ সঠিক করে বলতে পারে না। আর এজন্য সবচেয়ে বড় খেসারত দিতে হচ্ছে বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সারদেরকে। পেপাল না থাকার কারণে অনেক রাস্তা ঘুরিয়ে, বিভিন্ন সার্ভিস চার্জ দিয়ে সবশেষে টাকা হাতে পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে পেপালের বিকল্প না খোজে আমাদের আর কোন উপায় থাকে না। পেপালের প্রধান বিকল্প হিসেবে “আ্যালার্টপে”। এটি পেপালের মতই একটি সহজ ও জনপ্রিয় পেমেন্ট পদ্ধতি ।

আমি যেভাবে পেপাল ও আ্যালার্টপে থেকে মোবাইলে টাকা এনে নেট বিল পরিশোধ করি তা আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব ।

পেপাল :

যে কোন ভাবে একটি পেপ্যাল একাউন্ট খুলে (ভেরিফাই এর দরকার নেই) তারপর সেখানে আয়ের জমাকৃত টাকা remit2cell.com থেকে সরাসরি মোবাইলে নিযে আসা যায়। যা থেকে খুব সহজেই নেট বা মোবাইল বিলের খরচটা হয়ে যায় ।

প্রথমে এখানে যান

এরপর পছন্দ অনুযায়ী টাকার পরিমান নির্বাচন করুন এবং Refill to এর ঘরে আপনার মোবাইল নাম্বার দিন । এরপর Add to cart এ ক্লিক করুন । এরপর আপনাকে পেপাল পেমেন্ট প্রসেসিং পেজে রিডিরেক্ট করা হবে ।

পেমেন্ট প্রসেসিং সম্পন্ন করুন এবং পেমেন্ট কনফার্মেশন মেইলটি bdcheckout@gmail.com এ ফরোয়ার্ড করুন (এই নির্দেশনা ওদের হোমপেজে ও পাবেন)।

কিছুক্ষনের মধ্যে আপনার একাউন্ট রিচার্জ হয়ে যাবে ।

বিঃদ্রঃ নেটওয়ার্ক জনিত সমস্যার জন্য কোন কোন সময় মোবাইলে টাকা আসতে সর্বোচ্চ আধা ঘন্টা দেরী হতে পারে ।

একটু ঝামেলা তাই না ?

আ্যালার্টপে :

প্রথমে এখানে যান এবং নির্দেশনা গুলো দেখে নিন ।
Amount এর স্হানে আপনার প্রয়োজনীয় অনুযায়ী amount বসান তবে নূন্যতম 3 ডলার দিতে হবে ( 5 % সার্ভিস চার্জ ওরা কেটে রাখবে )

Mobile number এর স্হানে 88 সহ আপনার মোবাইল নাম্বার লিখুন ।
এরপর alertpay donate বাটনে ক্লিক করুন ।

এরপর আপনাকে alertpay পেমেন্ট প্রসেসিং পেজে রিডিরেক্ট করা হবে । পেমেন্ট প্রসেসিং এর ২ মিনিটের মধ্যে আপনার মোবাইল রিচার্জ হবে ।

IDM registration করুন একদম ফ্রী,ব্যবহার করুন আজীবন

IDM আমার দেখা সবচেয়ে সেরা ডাউনলোড ম্যনেজার । আমি FDM, orbit downloader, ব্যবহার করেছি কিন্তু IDM এর মত উন্নত ডাউনলোডার আর দেখিনি । ইন্টারনেট ব্যবহার করে কিন্তু IDM ব্যবহার করে না এমন লোক খুব কমই আছে ।এর সাহায্যে যে কোন ফাইল খুব দ্রুত ডাউনলোড করা যায় । এছাড়াও এটি ফাইল রিজিউম,সিডিউল ডাউনলোড , ইউটিউব ডাউনলোড সাপোর্ট করে । কিন্তু সবচেয়ে বড় অসুবিধা এটি ফ্রী নয় । এই জন্যই পোষ্টটি দেওয়া।আশাকরি সবাই উপকৃত হবেন।
এ জন্য প্রথমেই আপনাকে http://www.mediafire.com/?sll6p5d4ucxgdy7 থেকে ৫.১৪mb এর rar ফাইল টি ডাউনলোড করতে হবে।এর পর rar ফাইল টিকে Extract করলে একটি ফোল্ডার তৈরি হবে।ফোল্ডার এর ভিতরের read me টি ডাবল ক্লিক করে ওপেন করতে হবে।অতঃপর IDM টি ইনিস্টল করতে হবে।idm ইন্সটল হলে টাস্ক বাড়ে যে আইকন আসবে তাতে right click করে exit করতে হবে।এখন extract করার ফলে যে ফোল্ডার তৈরি হয়েছে তার ভিতর patch নামক ফোল্ডার এর ভিতর IDMan application টি copy করে local disk(c:)>program file>Internet Download manager এর ভিতর past করুন।এর পর IDM open করে Registation button এ click করে ছক টি পুরন করতে হবে।সিরিয়াল কি এর যায়গায় read me থেকে প্রাপ্ত সিরিয়াল কি টি past করে ok করতে হবে।তাহলে আপনার IDM টি registered হয়ে যাবে।

সোমবার, ২৫ জুলাই, ২০১১

আমার প্রিয় কিছু রোমান্টিক মুভি ( ডাউনলোড লিঙ্ক সহ )

1. My Sassy Girl (2001) (Korean) :

ট্রেনে এক অপরিচিত মাতাল মেয়েকে নিয়ে ফেঁসে গেল কাইয়েন হু ।মেয়েটির উপকার করে শেষ পর্যন্ত যেতে হল পুলিশের ঘরে । ভাবল এখানেই শেষ , কিন্তু সেই মেয়ে তাকে উপকারের জন্য ধন্যবাদ তো দিলই না বরং তাকে দিয়ে যাচ্ছেতাই কাজ করাতে লাগল । বেশ কয়েকদিনের পরিচয়ের পর তাকে ভালবেসে ফেলল কাইয়েন হু। কিন্তু তাদের পরিচয় বোধহয় আলাদা হওয়ার জন্যই । মেয়েটি হঠাৎ এক সিদ্ধান্ত নিল , দুইজনেই একটা করে চিঠি লিখবে , আর সেই চিঠি রাখা হবে এক গোপন স্থানে দুই বছর পরে তারা আবার দেখা করে সেই চিঠি পড়বে । কাইয়েন হু'র এখন অপেক্ষার পালা , চিঠিতে কি লেখা আছে পড়ার জন্য ।

আমার লেখা রিভিউ গুলার মধ্যে অনেক ভাল ছবির যাচ্ছেতাই একটা রিভিউ পড়লেন । কোরিয়ান এই মুভিটার কাহিনী মেকিং এবং থিম সবকিছুই অসাধারন । নায়িকার অভিনয় আমার কাছে সেইরকম লেগেছে । এটাকে নকল করে একটা ইংলিশ মুভি আছে ( এলিশা ক্যাথবার্ট অভিনিত এবং একই নামে ) সেটাও দেখতে পারেন । তবে কোরিয়ানটার ধারেকাছেও হয়নি সেটি । শুধু রোমান্টিকতাই নয় বেশ কমেডিও আছে মুভিটাতে , ভাল লাগতে বাধ্য ।

তথ্য জানতে

ডাউনলোড লিঙ্কসঃ

টরেন্ট লিঙ্ক

স্টেজভু লিঙ্ক





2. P S I Love You (2007) :

স্বামী গ্যারী ( জেরার্ড বার্টলার ) মারা যাওয়ার পর হলি ( হিলারি সাঙ্ক ) এর কাছে স্বামীর নামে চিঠি আসতে থাকল । চিঠিগুলো পড়ে হলি আবার নতুন করে বুঝতে শুরু করল গ্যারী তাকে কতটা ভালোবাসত । হলি পরিচিত হতে লাগল নতুল এক জীবনের সাথে , জানতে লাগল তার অনেক অজানা অধ্যায় । আর একটা চিঠি পাওয়ার পর শুরু হয় অপেক্ষার পালা পরের চিঠির জন্য । ( চিঠি গুলো কিভাবে আসে তা নাহয় মুভির শেষেই জানতে পারবেন ) ।


তথ্য জানতে

ডাউনলোড লিঙ্কসঃ

টরেন্ট লিঙ্ক

স্টেজভু লিঙ্ক

মিডিয়াফায়ার লিঙ্ক (৩০০ এমবি )

3. Last Chance Harvey (2008) :

হারভের ( ডাস্টিন হফম্যান ) স্ত্রী আর কন্যার সাথে ছাড়াছাড়ি হয়েছিল অনেক আগেই ।প্রাক্তন স্ত্রী এখন আরেকজনের বৌ, থাকে লন্ডনে তার মেয়ের সাথে । আর হারভে থাকে আমেরিকায় । মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে লন্ডনে এসে পড়ল বিব্ররকর পরিস্থিতিতে । মেয়ের বাবা হিসাবে তার বদলে পরিচয় দেয়া হবে তার স্ত্রীর বর্তমান স্বামীকে । এদিকে লন্ডনে বেশিদিন থাকার কারনে চাকরীও হারাতে হল । আর এই কঠিন অবস্থায় তার সাহায্যে এগিয়ে আসল একজনই কেট ওয়াকার ( এমা থমসন ) । ভুল বসত তাকেও হারাতে চলল হারভে । তবে একটা শেষ সুযোগ আছে তাকে ফিরিয়ে আনার , এবং হারবেকে তাই করতে হবে ।

তথ্য জানতে

ডাউনলোড লিঙ্কসঃ

টরেন্ট লিঙ্ক

স্টেজভু লিঙ্ক ( ফ্রেন্স ল্যাঙ্গুয়িজ )

মিডিয়াফায়ার লিঙ্ক (৩০০ এমবি )

সব সময়ের সেরা ১৩টি অ্যাকশন মুভি (ডাউনলোড লিংকসহ)

১. দ্য কনডেমনড
ছবি মুক্তি : এপ্রিল, ২০০৭
ডাউনলোড লিংক | ছবি সম্পর্কে বিস্তারিত
ঘটনাক্রম : দুর্নীতিগ্রস্থ এক মার্কিন কারাগারে মৃত্যুদণ্ডের অপেক্ষায় প্রহর গুণছিলেন এক দুর্ধর্ষ কয়েদি - জ্যাক কনরাড। এ সময় জেলারের কাছ থেকে তাকে কিনে নেন এক ধনী টেলিভিশন প্রযোজক। কনরাডের সঙ্গে আরো নয় দুর্ধর্ষ খুনে কয়েদিকে ছেড়ে দেওয়া হয় বিশ্বের এক প্রান্তে- জনমানবহীন এক গহীন দ্বীপে। শুরু হয় দশ কয়েদির মরণপণ লড়াই। পুরো এলাকায় ছোট ছোট ক্যামেরা লাগিয়ে সেই প্রাণঘাতী দৃশ্য অর্থের বিনিময়ে সরাসরি প্রচার করা হয় ইন্টারনেটে।

২. ডাই-হার্ড
ছবি মুক্তি : ১৫ জুলাই ১৯৮৮
ডাউনলোড লিংক | ছবি সম্পর্কে বিস্তারিত
ঘটনাক্রম : ডাই-হার্ডকে বলা হয়, সর্বকালের সবচেয়ে সেরা অ্যাকশন ছবি। এটা আপনি নাও মানতে পারেন, তবে অ্যাকশন ছবির যে ধরনের তালিকাই করুন না কেন, ডাই-হার্ডকে ওপরদিকে রাখতেই হবে। আছেন এক ও অদ্বিতীয় ব্রুস উইলিস।

৩. ডেথ রেস
ছবি মুক্তি : আগস্ট, ২০০৮
ডাউনলোড লিংক | ছবি সম্পর্কে বিস্তারিত
ঘটনাক্রম : পানিবন্দি এক অদ্ভূত কারাগারের কাহিনী, যেখানে বাছাই করা বন্দিদের অকল্পনীয় নিষ্ঠুর মোটর রেসিংয়ে বাধ্য করা হয়। সেটা শুধুই গাড়ি চালনা নয়, যে কোনো মূল্যে প্রতিদ্বন্দ্বীদের হত্যা করে সেখানে বিজয় ছিনিয়ে আনতে হয়। আর পথে পথে অজানা সব বিপদ তো রয়েছেই।

৪. ফার্স্ট ব্লাড
ছবি মুক্তি : ২২ অক্টোবর ১৯৮২
ডাউনলোড লিংক | ছবি সম্পর্কে বিস্তারিত
ঘটনাক্রম : ভিয়েতনাম থেকে ফেরা এক মানসিক বিপর্যস্ত সৈনিক চরম নিগ্রহের শিকার হয় পুলিশের হাতে। এরপর শুরু হয় 'আ ওয়ান ম্যান ওয়ার!' আগাগোড়াই সিলভেস্টার স্ট্যালোনের ছবি।

৫. ক্রাউচিং টাইগার, হিডেন ড্রাগন
ডাউনলোড লিংক | ছবি সম্পর্কে বিস্তারিত
ছবি মুক্তি : ২২ ডিসেম্বর ২০০০
ঘটনাক্রম : এই ছবিটিকে বলা হয়ে থাকে, সবচেয়ে দুর্দান্ত মার্শাল আর্ট মুভি। স্পেশাল এফেক্টগুলো দেখার মতো। মার্কিন মুল্লুকে প্রথম বিদেশী ছবি হিসেবে এটি আয় করে ১০০ মিলিয়নেরও বেশি ডলার।

৬. রিং অফ ডেথ
ছবি মুক্তি : ২০০৮
ডাউনলোড লিংক | ছবি সম্পর্কে বিস্তারিত
ঘটনাক্রম : ভয়াল এক নিষ্ঠুর কারাগারের ধারাবাহিকভাবে কয়েদীদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে থাকে। সাবেক এক পুলিশ সদস্যদের ওপর দায়িত্ব পড়ে রহস্য উদঘাটনের। সাজানো মামলায় কয়েদী হয়ে একদিন তিনি ঢুকে পড়েন সেই কারাগারে...

৭. টার্মিনেটর টু : জাজমেন্ট ডে
ছবি মুক্তি : ৩ জুলাই ১৯৯১
ডাউনলোড লিংক | ছবি সম্পর্কে বিস্তারিত
ঘটনাক্রম : আভাটার ও টাইটানিকখ্যাত জেমস কামেরনের ছবি। তার চেয়েও বেশি আর্নল্ড শোয়ার্জেনেগারের ছবি। ক্যালিফোর্নিয়ার বর্তমান গভর্নরের এই একটি ছবিই বোধহয় শেষপর্যন্ত মনে রাখতে পেরেছি!

৮. রেম্বো
ছবি মুক্তি : ২৫ জানুয়ারি ২০০৮
ডাউনলোড লিংক | ছবি সম্পর্কে বিস্তারিত
ঘটনাক্রম : বর্মী জান্তার হাতে একদল সাহায্যকর্মী অপহৃত হলে তাদের উদ্ধার করতে ছুটে যান জন রেম্বো।

৯. ইউনিভার্সাল সোলজার: রিজেনারেশন
ছবি মুক্তি : জানুয়ারি ২০১০
ডাউনলোড লিংক | ছবি সম্পর্কে বিস্তারিত
ঘটনাক্রম : অতি গোপনীয় মার্কিন প্রযুক্তি চুরি করে পরীক্ষাগারে জিনেটিক পরিবর্তন ঘটিয়ে রুশ সন্ত্রাসবাদীরা তৈরি করে পরবর্তী প্রজন্মের সৈনিক, প্রকৃত অর্থে যারা নির্দেশনির্ভর 'কিলিং মেশিন'। সন্ত্রাসবাদীরা যখন অপ্রতিরোধ্য পুরোপুরি, তখন ত্রাতা হয়ে ওঠে মার্কিন পরীক্ষাগারে তৈরি পরবর্তী প্রজন্মের আরেক সৈনিক। জাঁ ক্লদ ভ্যান ড্যাম, ডল্ফ লান্ডগ্রেন, আন্দ্রেই আরলোভস্কি আছেন প্রধান তিন চরিত্রে।

১০. রেগিং বুল
ছবি মুক্তি : ডিসেম্বর, ১৯৮০
ডাউনলোড লিংক | ছবি সম্পর্কে বিস্তারিত
ঘটনাক্রম : আবেগপ্রবণ এক আত্মবিধ্বংসী বক্সারের জীবনকথা। উত্থান থেকে পতনের কাহিনী। তুমুল তরুণ রবার্ট ডি নিরোকে পাওয়া যাবে এই ছবিতে।

১১. দ্য সিজ
ছবি মুক্তি : ৬ নভেম্বর ১৯৯৮
ডাউনলোড লিংক | ছবি সম্পর্কে বিস্তারিত
ঘটনাক্রম : মার্কিন মিলিটারি কর্তৃক ইসলামিক নেতাকে অপহরণের পর নিউ ইয়র্ক সিটি হয়ে পড়ে সন্ত্রাসী আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু। প্রতিক্রিয়াস্বরূপ সামরিক শাসন জারি হলে একপর্যায়ে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যায় এফবিআই ও মিলিটারি। ডেনজেল ওয়াশিংটন এবং ব্রুস উইলিস আছেন এই ছবিতে।

১২. শুটআউট অ্যাট লোখান্ডওয়ালা
ছবি মুক্তি : ২৫ মে ২০০৭
ডাউনলোড লিংক : টরেন্টে পাবেন, সরাসরি লিংক পাইনি | ছবি সম্পর্কে বিস্তারিত
ঘটনাক্রম : ভারতীয় পুলিশের একটি বিশেষ দলের কুখ্যাত এনকাউন্টার নিয়ে প্রচলিত একটি গুজবের ওপর ভিত্তি করে তৈরি ছবি। এতে আছেন অমিতাভ বচ্চন, সঞ্জয় দত্ত, সুনীল শেঠি, অভিষেক, বিবেক ওবেরয়।

১৩. ট্যাঙ্গো চার্লি
ছবি মুক্তি : ২৫ মার্চ ২০০৫
ডাউনলোড লিংক : টরেন্টে পাবেন, সরাসরি লিংক পাইনি | ছবি সম্পর্কে বিস্তারিত
ঘটনাক্রম : ভারতের ভেতরে, বিশেষত উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চলমান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও সংঘাত নিয়ে তৈরি এই ছবি মনে দাগ কাটার মতো। আছে নকশাল বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানের কথাও।

ক্লাসিক মুভি ডাউনলোড লিঙ্ক সহ

১। Sophie's Choice

ডাউনলোড লিংক: (সাইজ - ১.৩৭ গিগাবাইট)
ক্লিক করুন

২। The Graduate

ডাউনলোড লিংক: (সাইজ - ৭০০ মেগাবাইট)
ক্লিক করুন

৩। on golden pond

ডাউনলোড লিংক: (সাইজ - ১৪১৫ মেগাবাইট)
ক্লিক করুন

৪। Guess Who's Coming To Dinner

ডাউনলোড লিংক: (সাইজ - ৭০০ মেগাবাইট)
ক্লিক করুন

৫। One Flew over The cuckoos nest

ডাউনলোড লিংক: (সাইজ - ৮৪২ মেগাবাইট)
ক্লিক করুন

বিখ্যাতদের মজার কাহিনী (অ্যালবার্ট আইনস্টাইন)

(১)জার্মান রাষ্ট্রদূতের সাথে আইনস্টাইন দেখা করতে যাওয়ার সময় তার স্ত্রী তাকে পোশাক পাল্টে যেতে বললে তিনি বললেন-'তারা যদি আমাকে দেখতে চায় তাহলে আমি তো আছিই,আর তারা যদি আমার পোশাক দেখতে চায়,তাহলে আলমারি খুলে আমার স্যুটগুলো দেখিয়ে দিও।'

(২)আপেক্ষিকতার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে একবার তিনি বলেন-'জ্বলন্ত চুলার উপর একমিনিট হাত ধরে রাখুন,মনে হবে যেন একঘন্টা।আর চমৎকার কোনো মেয়ের পাশে একঘন্টা বসে থাকুন,মনে হবে মাত্র একমিনিট কেটেছে।আর হ্যাঁ,এটাই আপেক্ষিকতা।'

(৩)একদিন প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি থেকে বাসায় ফেরার সময় আইনস্টাইন বাসার ঠিকানা ভুলে গেলেন।যে ক্যাবে উঠেছিলেন,তার চালক তাকে চিনত না।তিনি জিজ্ঞাসা করলেন সে আইনস্টাইনের বাসা চেনে কীনা।চালক বললো-'আরে!সেটা কে না জানে?প্রিন্সটনের সবাই জানে।তুমি কি তার সাথে দেখা করতে চাও?'আইনস্টাইন বললেন-'আমিই আইনস্টাইন।বাসার ঠিকানা ভুলে গেছি।তুমি কি আমাকে পৌঁছে দিবে?'

(৪)আইনস্টাইন একবার প্রিন্সটন থেকে ট্রেনে করে যাচ্ছিলেন।একসময় টিকিট চেকার টিকিট চেক করতে করতে তার কাছে আসলো।আইনস্টাইন টিকিটের জন্য কোটের পকেটে হাত ঢুকালেন,সেখানে নাই।এবার প্যান্টের পকেটে,না,সেখানেও নেই।তিনি ব্রিফকেস খুলে দেখলেন,পাশের সিটে খুঁজলেন,কিন্তু যে লাউ,সে-ই কদু;টিকিট মিললো না।
তখন টিকিট চেকার বললেন-'আপনাকে আমি চিনি,আমরা সবাই-ই চিনি।আপনি নিশ্চয়ই টিকিট কিনেছিলেন।আপনি এর জন্য ব্যতিব্যস্ত হবেন না।'
আইনস্টাইন মাথা নোয়ালেন।টিকিট চেকার অন্যদের টিকিট চেক করতে লাগলেন।কামরা ছেড়ে যাবার সময় হঠাৎ ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন আইনস্টাইন হাত আর হাঁটুর উপর ভর দিয়ে সিটের নিচে টিকিট খুঁজছেন।
তিনি তৎক্ষণাৎ দৌড়ে গেলেন,বললেন-'ডক্টর আইনস্টাইন,ডক্টর আইনস্টাইন,আপনি খামাখা চিন্তা করছেন,আমি আপনাকে চিনি।কোন সমস্যা হবে না।আপনার টিকিট লাগবে না!'
আইনস্টাইন তার দিকে তাকালেন এবং বললেন-'ইয়ং ম্যান,আমিও আমাকে চিনি।কিন্তু সমস্যা হচ্ছে,আমি জানি না আমি কোথায় যাচ্ছি।'

(৫)কাজে যাওয়ার সময় আইনস্টাইনের স্ত্রী তাকে ভালো পোশাক পরে যেতে বললে তিনি বলতেন-'কেন?সেখানে সবাই-ই তো আমাকে চেনে।'তার প্রথম বড় কনফারেন্সের সময় একই অনুরোধে তার প্রত্যুত্তর-'কেন?ওখানে তো কেউ আমাকে চেনে না!'

আইনস্টাইনের বচনামৃত-
১।মেধাবীরা সমস্যার সমাধান করে,আর বুদ্ধিমানেরা সেগুলোর পথ আটকায়।
২।পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন বিষয় যা বোঝা যায় না তা হলো আয়কর।
৩।জ্ঞান অপেক্ষা কল্পনা শ্রেয়।(প্রিন্সটনে তার অফিসে ঝুলত এই সাইনবোর্ড)
৪।স্কুলে যা শেখা হয়,তার সবটুকুই ভুলে যাবার পর যা থাকে তা-ই হলো শিক্ষা।
৫।দুইটি জিনিস অসীম-একটি মহাবিশ্ব,অন্যটি মানুষের নির্বুদ্ধিতা,অবশ্য প্রথমটির ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই।
৬।বোকামী হলো একই কাজ বারবার করে ভিন্ন ভিন্ন ফল প্রত্যাশা করা।

সংগ্রহ করে রাখুন কিছু বিখ্যাত ব্যাক্তিদের বাণী এবং জীবন পথে মেনে চলার চেষ্টা করুন

* উদীয়মান সুর্যের দিকে যার চোখ নেই, সে-ই ডুবন্ত তারার কথা বলে থাকে-সংগ্রহ
* নতুন দিনই নতুন চাহিদা ও নতুন দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দেয়- জন লিভেগেট
* যেখানে পরিশ্রম নেই সেখানে সাফল্য ও নেই-উইলিয়াম ল্যাংলয়েড
* গুণমন হইলেই মানে সব ঠাঁই, গুণহীনে সমাদর কোনখানে নাই-ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
* জয়ী হবে যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি দৃঢ় ঈমান রাখতে পার-আল-কোরআন
* আমি তোমাকে সোনা কিম্বা রূপা দেইনি কিন্তু তার চেয়েও মুল্যবান জিনিস বই দিয়েছি-জর্জ ম্যাকডোনাল্ড
* নিশ্চয়ই নিজের মনের বিরুদ্ধে জেহাদ করাই শ্রেষ্ঠ জেহাদ-আল-কোরআন
* অতি নির্বোধও অত্যাচারের প্রতিবাদ করে-সুইনবান
* এলেম শিক্ষা করা প্রত্যেক নারী-পুরুষের উপর...
* যে প্রেমিক কান্ড জ্ঞানের পরিচয় দেয়, সে মোটেই প্রেমিক নয় - নর্মান ডগলাস
* নীরবতা মঙ্গল না করতে পারে কিন্তু ক্ষতি করে না - জর্জ রিচার্ড
* প্রতিটি দুঃখী আত্মা সততার প্রতীক- হোমার
* নগরের দশজন বীর পুরুষের চেয়ে জ্ঞানী একজন মানুষ বেশী শক্তিশালী-বাইবেল
* দৃঢ় বিশ্বাস, অনবরত প্রচেষ্টা এবং বিশ্বজয়ী প্রেম-জীবনযুদ্ধ এই হলো মানুষের হাতিয়ার-আল্লামা ইকবাল
* দুঃখের ব্যথা-বেদনা থেকে বাঁচতে হলে কাজের ভিতর দিয়ে বাঁচতে হবে-জি, এইচ, লিউএস
* কর্মব্যস্ত লোকের জীবনে স্বপ্ন বলে কিছু থাকে না-ডব্লিউ জি বেনহাম
* প্রতিভাবানদের জন্য স্মৃতিশক্তি হচ্ছে এক অমূল্য সম্পদ -জে, এফ, নিসবেট
* চিন্তা কর বেশি, বল অল্প এবং লেখ তার চেয়েও কম-জনরে
* জুলুম ও অত্যাচারী লোক কিয়ামতের দিন অন্ধ হইয়া উঠিবে-আল-হাদিস
* সম্পদ কোন দিন সভ্যতা আনতে পারে না, কিন্তু সভ্যতা সম্পদ আনতে পারে-হেনরি ওয়ার্ড
* ধর্মহীন বিজ্ঞান পঙ্গু আর বিজ্ঞানবিহীন ধর্ম অন্ধ-আইনস্টাইন
* নীরব থাকলে ভালো না হোক ক্ষতির সম্ভাবনা খুব কম-রিচার্ড বার্থওয়েট
* আমি গর্বিত এই জন্য যে, আমার বন্ধুরা দরিদ্র হলেও সৎ-জন ওজেল
* বিশ্বাস জীবনকে গতিময়তা দান করে, আর অবিশ্বাস জীবনকে দুর্বিসহ করে তোলে-মিল্টন
* অতিরিক্ত চাহিদাই মানুষের পতনকে ডেকে আনে-রবার্ট বার্টন
* অলংকারের সাহায্যে সৌন্দর্য বৃদ্ধির অর্থ হচ্ছে প্রকৃত সৌন্দর্যকে লুকিয়ে রাখা-এডিলা মূরগ্যান
* পৃথিবী আমার দেশ, সমগ্র মানব জাতি আমার ভাই এবং মানুষের মঙ্গল কামনা করাই আমার ধর্ম-টমাস পাইন
* দুষ্টু লোকেরা তাদের গড়া নরকেই বাস করে-টমাস কুলার
* মায়ের শিক্ষাই শিশুর ভবিষ্যতের বুনিয়াদ-নেপোলিয়ন
* যে আশা করে সেই ভুগে আর যে ভুল করে সে সাহসী হয়-হুইটিয়ার
* দেহকে শক্তিশালী করে তোল, তবে সে মনের নির্দেশ মেনে চলবে-জন লক
* যে পরিশ্রমী সে অন্যের সহানুভূতির প্রত্যাশী নয়-এডমণ্ড বার্ক
* জ্ঞানী পুত্র পিতার আনন্দ বর্ধন করে কিন্তু নির্বোধ পুত্র মাতার কষ্টের কারণ-হযরত সোলায়মান (রাঃ)
* সত্যকে ভালবাস, কিন্তু ভুলকে ক্ষমা কর-ভলতেয়ার
* বিবেক ! বিবেকই হল মানুষের সবচেয়ে বেশি বিশ্বাসী বন্ধু-ক্রাবী
* বৎসর হিসাবে অভিজ্ঞতার হিসাব করা অর্থহীন-ইরাসমুস
* কর্মদক্ষতাই মানুষের সর্বাপেক্ষা বড় বন্ধু-দাওয়ানী
* আত্মহত্যা জীবনের সবচেয়ে বড় কাপুরুষতার পরিচয়-নেপোলিয়ান
* ব্যায়ামের দ্বারা যেমন শরীরের উন্নতি হয়, পড়াশুনার দ্বারা মনেরও তেমনি উন্নতি হয়ে থাকে-এডিসন
* মনের উদারতার সাথে ঐশ্বর্যের তুলনা করা চলে না-মার্শাল
* নদীতে স্রোত আছে তাই নদী বেগমান, জীবনে দ্বন্দ্ব আছে তাই জীবন বৈচিত্রময়-টমাস মুর
* দারিদ্রকে যে মাথা পেতে গ্রহণ করে, সে ব্যক্তিত্বহীন পুরুষ-লংফেলো
* অবাধ্য বউ যার, জীবন তার দূর্বিসহ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
* তোমার জীবনের প্রতিটি আনন্দঘন মহূর্তের দাম লক্ষ টাকা-জন বেল
* একজন অল্প বয়স্কা তরুণী, বউ হিসাবে অথবা মা হিসাবে কোনটাতেই ভাল নয়-জন এডামস
* যে ব্যক্তি মানুষকে দয়া করে না, আল্লাহ তায়ালা তাহার উপর রহমত বর্ষণ করে না-আল-হাদিস
* যাকে মান্য করা যায় তার কাছে নত হও-টেনিসন
* যারা আত্মপ্রশংসা করে খোদা তাহাদেরকে ঘৃণা করেন-সেন্ট ক্লিমেন্ট
* যার অল্প আছে সে দরিদ্র নয়, যে বেশি আশা করে সে-ই দরিদ্র-ডানিয়েল
* নিশ্বয়ই সীমা লংঘনকারীকে আল্লাহ ভালবাসেনা না-আল-কোরআন
* গর্ব না করাই গর্বের বিষয় বড় হয়েও নিজেকে ছোট মনে করা গৌরবজনক-প্লেটো
* কিছু কিছু গোপনীয়তা রক্ষা না করে চললে কোন বন্ধুত্ব অটুট থাকে না -ডব্লিউ এস ল্যান্ডার
* প্রতিটি মানুষ চাঁদের মতো, যার একটা অন্ধকার দিক আছে যে দিবসে কাউকে দেখতে চায়না-মার্ক টোয়াইন
* যে গর্ভ তোমাকে ধারন করেছে সে গর্ভধারিণী মায়ের প্রতি কর্তব্য কর ও শ্রদ্ধা নিবেদন কর-আল-কোরআন
* একজন লোকের জন্য একজন শত্র“ই যথেষ্ট-টমাস মিডলটন
* চিত্তকে মিথ্যার বিরুদ্ধে স্বাধীন করে রাখার নামই ধর্ম-ডা. লুৎফর রহমান
* এক খুন করলে তাকে খুনী বলা হয়, আর লক্ষ খুন করলে তাকে বীর বলা হয়-বি,পি পোরটিয়াস
* নিরবতা এক ধরণের অলঙ্কার যা মহিলাদের জন্য অত্যন্ত শোভনীয়-হেনরী ডেজন
* একটি কাজের জন্য পুরষ্কার পাওয়ার মানেই আরেকটি কাজে হাত দেওয়ার উৎসাহ লাভ করা-হেনরী ক্লে
* মানুষের কল্যাণের জন্য করা প্রতিটি কাজই সম্মানজনক-উইলিয়াম ওয়াটসন

বাংলা বই ডাউনলোডের জনপ্রিয় কয়েকটি ওয়েব সাইটের বর্ণনা ও ঠিকানা

অনলাইনে বাংলা বই ডাউনলোডের জন্য ইন্টারনেটে সার্চ করলেই অনেক ওয়েব সাইটের ঠিকানা পাওয়া যায় কিন্তু কোন সাইটে গেলে প্রয়োজনীয় বইটা সহজে খুজে পাবো এটা আমরা বুঝতে পারি না। আবার সাইট পাওয়া গেলেও অনেক ওয়েব সাইটে রেজিষ্ট্রেশন ছাড়া ডাউনলোড লিঙ্ক পাওয়া যায় না। অনেক ওয়েব সাইট নিয়মিত আপডেট হয় না, ফলে নতুন বই আমরা ডাউনলোড করতে পারি না। অনেক ওয়েব সাইটে বইয়ের সংখ্যা খুবই কম। এমনিতেই আমাদের দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারীর সংখ্যা কম এবং ইন্টারনেটের স্পিড খুবই কম। বাংলা গল্প, উপন্যাসের পাঠক সংখ্যা বেশ ভাল, কিন্তু ইন্টারনেট থাকলেও বই ডাউনলোড করে পড়া পাঠকের সংখ্যা খুবই কম। তাই ইন্টারনেট থেকে পিডিএফ আকারের বই তারাই ডাউনলোড করে যাদের ইন্টারনেট লাইন সহ কম্পিউটার আছে এবং বাংলা বই পড়তে পছন্দ করে। আমার এই লেখার উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলা বই এর পাঠক সংখ্যা বাড়ানো এবং ইন্টারনেট থেকে বাংলা বই ডাউনলোড কে জনপ্রিয় করা। এখন আমি বাংলা বই ডাউনলোডের জন্য সমৃদ্ধ এবং জনপ্রিয় কয়েকটি ওয়েব সাইট সম্বন্ধে বর্ণনা করবো ও ডাউনলোডের লিঙ্ক দিব।





১। ফ্রি বাংলা বুক্‌সঃ বিশ্ব রেঙ্কিং : ৩৪০০৬৬ বাংলাদেশে রেঙ্কিং: ৪৮৮

বাংলা বই ফ্রি ডাউনলোডের জন্য সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ওয়েব সাইট হচ্ছে ফ্রি বাংলা বুক্‌স (http://www.freebanglabooks.com)। ওয়েবসাইট টিতে সহস্রাধিক বই রয়েছে এবং নিয়মিত বই আপডেট হয় এবং রেজিষ্ট্রেশনের কোন ঝামেলা ছাড়াই ফ্রি সব বই ডাউনলোড করা যাই। এই সাইটে লেখকের এবং বইয়ের ক্যাটগরী অনুযায়ী বই খোজা ও ডাউনলোডের অফশন রয়েছে। একেবারে সাধারন ডিজাইনের কারনে সহজেই বই খুজে পাওয়া যায় এবং ডাউনলোডের লিঙ্ক পাওয়া যায়। সাইটটির ওয়ার্ল্ড ও বাংলাদেশ রেঙ্কিং দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছ।

ওয়েব সাইটে প্রবেশ করতে এখানে ক্লিক করুন।




২। আমার বই : বিশ্ব রেঙ্কিং : ৩৪১২১৮ বাংলাদেশে রেঙ্কিং: ২১৫৬

সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয় হওয়া আর একটি ওয়েব সাইটের নাম আমার বই (http://www.amarboi.com )। সাইটের লেয়াউট অনেক সুন্দর এবং সাইটটি সম্পূর্ন বাংলায়। সাইটটি নিয়মিত আপডেট হয় এবং বইয়ের সংখ্যা ও বেশ। সাইটটির ওয়ার্ল্ড ও বাংলাদেশ রেঙ্কিং বেশ ভাল।

ওয়েব সাইটে প্রবেশ করতে এখানে ক্লিক করুন।


৩।বাংলা কিতাব : বিশ্ব রেঙ্কিং : ৩৭৪৬৩১ বাংলাদেশে রেঙ্কিং: ২১৬৮
বাংলা কিতাব (http://www.banglakitab.com) ওয়েব সাইটটি মূলত ইসলামিক বই ডাউনলোডের সাইট। সাইটটি দেখতে খুব সাধারন মানের এবং এখানে বিভিন্ন বইয়ের ডাউনলোড লিঙ্ক সরাসরি দেওয়া থাকে, তবে বই লিঙ্ক বিভিন্ন খন্ডে ভাগ করে দেওয়া থাকে এবং বইয়ের কোন কাভারের ইমেজ থাকে না। এই সাইটটি বেশ আগের এবং সার্চ করলে সাইটের এড্রেসটি প্রথম দিকেই থাকে।
ওয়েব সাইটে প্রবেশ করতে এখানে ক্লিক করুন।

৪। ইবুক বিডি: বিশ্ব রেঙ্কিং : ৩৮০৬০০ বাংলাদেশে রেঙ্কিং: ৩০০৫
ইবুক বিডি(http://ebookbd.info) সাইটিটি বাংলা বই ও ইংরেজী বইয়ের সংমিশ্রনে তৈরি করা হয়েছে। সাইটটির লেয়াউট এবং ক্যাটাগরী এলোমেলো ভাবে সাজানো। সাইটিতে অনেক সাইটের লিঙ্ক দেওয়া হয়েছে এবং বই ডাউনলোডের লিঙ্ক প্রায়ই খুজে পেতে সমস্যা হয়। সাইটটির বয়স বেশি না হলেও অল্প দিনেই রেঙ্কিং এ অনেক এগিয়ে গেছ।
ওয়েব সাইটে প্রবেশ করতে এখানে ক্লিক করুন।


৫। অল বিডি বুক্স: বিশ্ব রেঙ্কিং : ৪৪০০৩৮ বাংলাদেশে রেঙ্কিং: ২১৪৬
বাংলা বই ডাউনলোডের নতুন কয়েকটি ওয়েব সাইটের মধ্যে অল বিডি বুক্স (http://www.allbdbooks.com) ও পড়ে। এটি ও অল্প সময়ে পাঠকের মন জয় করেছে। এখানে বই, ম্যাগাজিন সহ বিভিন্ন বই পাওয়া যাই এবং ক্যাটাগরী অনুযায়ী বইয়ের সংখ্যাও দেখা যায়। তবে সাইটের কোন নিদ্দির্ষ্ট নাম বা শিরোনাম না থাকায় অনেকেই না বুঝে বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে বসবে। সাইটটির লেয়াউট দেখে সহজেই বোঝা যাই এটা একটা বইয়ের সাইট।   

ওয়েব সাইটে প্রবেশ করতে এখানে ক্লিক করুন।


৬। বিডি বুক্‌স ২৪: বিশ্ব রেঙ্কিং : ৪৪২২৯০ বাংলাদেশে রেঙ্কিং: ২৪৯৭ 

ফ্রি ডোমেন এবং ব্লগ দিয়ে তৈরী সাইটিও (http://www.bdbooks24.co.cc)বেশ জনপ্রিয়। সাইটির লেয়াউট দেখেই বোঝা যাই এটা ফ্রি বানানো এবং সাইটটি লোড হতে অনেক সময় নেয়। এই সাইটের ক্যাটাগরী ও এলোমেলোভাবে সাজানো এবং কম্পিউটার সম্পর্কিত অনেক ইংরেজী বইও এখানে পাওয়া যায়।

ওয়েব সাইটে প্রবেশ করতে এখানে ক্লিক করুন।

৭। রাসাল : বিশ্ব রেঙ্কিং : ৫৭৪১১৩ বাংলাদেশে রেঙ্কিং: ৩৩৭০
রাসাল ওয়েব সাইট (http://rashal.com/) মুলত বিভিন্ন লেখক সম্পর্কে তথ্য ও তাদের লেখা কিছু বই নিয়ে সাজানো। এখানে নতুন, পুরনো অনেক লেখকের বিভিন্ন বই, ছোট গল্প ও কবিতার ডাউনলোডের লিঙ্ক পাওয়া যাবে। সাইটটিও বেশ আগের, সাধারন লেয়াউট ও সম্পুর্ন ইংরেজীতে। সাইটে বইয়ের সংগ্রহ ও বেশ।



ওয়েব সাইটে প্রবেশ করতে এখানে ক্লিক করুন।

৮। মুর্ছনা : বিশ্ব রেঙ্কিং : ৬৩৪৭৬৬ বাংলাদেশে রেঙ্কিং: ৩৯৬৭ 

বাংলা বই ডাউনলোডের সবচেয়ে পুরানো এবং সমৃদ্ধ ওয়েবসাইটের নাম মুর্ছনা (http://www.murchona.org) । কিন্তু নিয়মীত আপডেট না হওয়া, প্রায়ই ওয়েবসাইটের ডিজাইন পরিবর্তন এবং নতুন অনেক ওয়েবসাইট প্রকাশের কারনে সাইটের জনপ্রিয়তা অনেক কমে গেছে। এ ওয়েবসাইট থেকে বই ডাউনলোড করতে গেলে রেজিষ্ট্রেশন করা বাধ্যতামুলক। সাইটের রেঙ্কিং এক সময় অনেক ভাল ছিল কিন্তু বর্তমানে ওয়ার্ল্ড এবং বাংলাদেশ রেঙ্কিং অনেক বেড়ে গেছে। 

ওয়েব সাইটে প্রবেশ করতে এখানে ক্লিক করুন।

কবি নজরুলের অদ্ভুত কান্ড, হাস্যরসের মন্তব্যগুলোর কয়েকটি.....

কাজী নজরুল এসেছেন সিরাজগঞ্জে।
ইসমাইল হোসেন সিরাজীর প্রতি কবির ছিল অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা ও বিনয়মিশ্রিত ভালোবাসা। সিরাজীর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কবি কাঁদলেন, খোদার কাছে মাগফেরাত চাইলেন। বেদনাবিধুর কণ্ঠে তিনি উপস্থিত লোকদেরকে শোনালেন, সিরাজী সাহেব আমাকে যে আদর করেছিলেন, তা আমার জীবনে শ্রেষ্ঠ পাওয়া। এমন আদর আমাকে এই বাংলার আর কেউ করে নাই। এই সিরাজগঞ্জ থেকে তিনি আমার জন্য মানি অর্ডার করে সেকালে দশটি টাকা পাঠিয়েছিলেন, বলেছিলেন, একটি কলম কিনে নিও. আমার কাছে এর বেশী এখন নেই, থাকলে তোমায় পাঠিয়ে নিজেকে ধন্য মনে করতাম।’ কথাগুলো বলার সময় বিদ্রোহী কবির চোখে অশ্র“ ছলছল করছিল।
সফরের তৃতীয় দিন কবি খেতে বসেছেন আসাদউদ্দৌলা সিরাজীর ঘরে। সবার পাত্রে ইলিশ ভাজা পরিবেশন করছেন তিনি। কবির পাত্রেও একখানা দিয়েছিলেন, কবি সেটি খেয়ে কেবল শেষ করছিলেন, তখনই একজন আরও কিছু ইলিশভাজা তার প্লেটে দিতে যাচ্ছিলেন, রসিক কবি নজরুল তাকে বাধা দিয়ে হো হো করে বলে উঠলেন, আরে আরে করছ কী? শেষকালে আমাকে বিড়াল কামড়াবে তো?

উপস্থিত সবাই কবির কথাটা বুঝতে পারল না। গিয়াসুদ্দীন নামে একজন জিজ্ঞেস করলেন, মানে?

কবি বলতে লাগলেন তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে, আরে বুঝলেন না! ইলিশ মাছের গন্ধ মুখে লালা ঝরায়, বিড়াল মাতাল হয়ে যায় এর ঘ্রাণে, বেশী খেলে কি আর রক্ষে আছে, সারা দেহ থেকে গন্ধ ছুটবে আর সে গন্ধ পেয়ে বিড়াল তেড়ে আসবে।
এমন ব্যাখ্যা শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।

খাওয়া দাওয়া শেষ। আয়োজকরা কবির পাতে দই ঢেলে দিচ্ছেন।
একটু দই মুখে দিয়ে কবি অদ্ভুত ভঙ্গিতে চোখ কপালে তুলে আসাদউদ্দৌলার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, কি হে! তুমি কি এই দই তেতুঁল গাছ থেকে পেড়ে নিয়ে এলে নাকি?
সবাই আবারও হাসতে হাসতে কাত হয়ে গেল।
টক দইয়ের জন্য মেজবানকে এভাবে শাসানো কবি নজরুল ছাড়া আর কার পক্ষে সম্ভব ছিল?

দই খাওয়া শেষ। পান জর্দা মুখে দিয়ে বেশ আয়েশী ভঙ্গিতে গা এলিয়ে শুয়ে আছেন কবি নজরুল।
এমন সময় এক লোক এল কবিকে সালাম করতে। দরজায় দাড়িঁয়ে সে বেশ জোরে আসসালামু আলাইকুম বলল। কবি তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন, আরে, দুর্গা দাসবাবুর মুখে আসসালামু আলাইকুম যে!,

উপস্থিত সবাই কবির এমন আজব কথা শুনে আগন্তুকের চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখে, লোকটি সত্যিই বাংলা নাট্যমঞ্চের বিখ্যাত নট দুর্গা দাসের মতো সুদর্শন। আগত লোকটি বিনীত ভাবে বললেন, আমি বন্দোপধ্যায় নই, সৈয়দ। এই তো রায়পুরায় আমার বাড়ী।
একজন অচেনা মানুষকে এমন ভড়কে দিতে কবির আকস্মিক মন্তব্যে আবার হো হো করে হেসে গড়াল ঘরশুদ্ধ সব মানুষ।

বন্ধু শৈলেনের কাছে এসে তার কাছে কবি চা চাইলেন এই বলে, তুমি তো অনেক টাকা পাবে আমার কাছে, হিসেব করে রেখো, আপাতত দু পেয়ালা চা দাও।
শৈলেন জিজ্ঞেস করে, দু পেয়ালা কেন?
কবি বলে চলেছেন, আরে, লাখ পেয়ালা চা না খেলে চালাক হয় না। লাখ পেয়ালা হতে আমার এখনও দু পেয়ালা বাকী আছে।
বন্ধুর কাছে থেকে চা আদায় করে নিতে এমন অদ্ভুত মন্তব্য ছিল কবির নিত্য অভ্যাস।

কবি নজরুলের পত্রিকা ধুমকেতুর অফিসে সারাক্ষণ চলত হাসি আনন্দের বন্যা। সেখানে সবাইকে চা দেয়া হতো মাটির ভাঁেড়।
এর কারণ কী?
কবি যখন চায়ে চুমুক দিতে দিতে তার কোন হাসির কথা মনে পড়ে যায় কিংবা কোন রসিক বন্ধুকে এই মাত্র অফিসে ঢুকতে দেখেন, অমনি দে গরুর গা ধুইয়ে বলে চায়ের পেয়ালা ছুড়ে মারতেন, মাটির পেয়ালা ভেঙে চা ছিটকে পড়তো কাগজে, মেঝেতে, মাদুরে, কারো গায়ে।
হাসতে হাসতে ক্লান্ত হতো কবির সঙ্গীরা, তবু থামতেন না কবি।

গোপীনাথ নামে একজন ধুমকেতুর অফিসে এসে এসব আজব কান্ড দেখে কবিকে জিজ্ঞেস করে বসল, আপনাদের মনে এত আনন্দ আসে কোত্থেকে?

এমন অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে কবি আবারও বলে উঠেন, দে গরুর গা ধুইয়ে, শোন, আনন্দ কোত্থেকে জাগে, তার উত্তর নেই, কিন্তু নিরানন্দ কেন হবে, তার উত্তর শুনতে চাই তোমার কাছে।

গোপীনাথ জবাব দেয়, দেশ পরাধীন, সাহেবদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ সবাই। এমন জ্বালার মধ্যে আনন্দ জাগে কীভাবে? প্রতিটি ইংরেজ আমাদের শত্র“, তারা বুক ফুলিয়ে হাঁটবে আর আমরা হাসব, গাইব?

ভরাট গলায় নজরুল তাকে বুঝালেন, প্রতিটি ইংরেজ নয়, সমগ্র ইংরেজ সমাজ আমাদের শত্র“, এ শত্র“দের ভাসিয়ে দিতে হলে চাই প্রাণবন্যা, এরই আবাদ করছি আমরা এখানে।’ গোপীনাথ চুপ হয়ে শুনে ভাবুক হয়ে যায় কবির জবাব শুনে।

আমি কিংবদন্তির কথা বলছি

আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।

তাঁর করতলে পলিমাটির সৌরভ ছিল

তাঁর পিঠে রক্তজবার মত ক্ষত ছিল।



তিনি অতিক্রান্ত পাহাড়ের কথা বলতেন

অরণ্য এবং শ্বাপদের কথা বলতেন

পতিত জমি আবাদের কথা বলতেন

তিনি কবি এবং কবিতার কথা বলতেন।



জিহ্বায় উচ্চারিত প্রতিটি সত্য শব্দ কবিতা,

কর্ষিত জমির প্রতিটি শস্যদানা কবিতা।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে ঝড়ের আর্তনাদ শুনবে।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে দিগন্তের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে আজন্ম ক্রীতদাস থেকে যাবে।



আমি উচ্চারিত সত্যের মতো

স্বপ্নের কথা বলছি।

উনুনের আগুনে আলোকিত

একটি উজ্জ্বল জানালার কথা বলছি।

আমি আমার মা'য়ের কথা বলছি,

তিনি বলতেন প্রবহমান নদী

যে সাতার জানে না তাকেও ভাসিয়ে রাখে।



যে কবিতা শুনতে জানে না

সে নদীতে ভাসতে পারে না।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে মাছের সঙ্গে খেলা করতে পারে না।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে মা'য়ের কোলে শুয়ে গল্প শুনতে পারে না



আমি কিংবদন্তির কথা বলছি

আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।

আমি বিচলিত স্নেহের কথা বলছি

গর্ভবতী বোনের মৃত্যুর কথা বলছি

আমি আমার ভালোবাসার কথা বলছি।

ভালোবাসা দিলে মা মরে যায়

যুদ্ধ আসে ভালোবেসে

মা'য়ের ছেলেরা চলে যায়,

আমি আমার ভাইয়ের কথা বলছি।



যে কবিতা শুনতে জানে না

সে সন্তানের জন্য মরতে পারে না।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে ভালোবেসে যুদ্ধে যেতে পারে না।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে সূর্যকে হৃদপিন্ডে ধরে রাখতে পারে না।



আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি

আমি আমার পূর্ব পুরুষের কথা বলছি

তাঁর পিঠে রক্তজবার মত ক্ষত ছিল

কারণ তিনি ক্রীতদাস ছিলেন।



আমরা কি তা'র মতো কবিতার কথা বলতে পারবো,

আমরা কি তা'র মতো স্বাধীনতার কথা বলতে পারবো!

তিনি মৃত্তিকার গভীরে

কর্ষণের কথা বলতেন

অবগাহিত ক্ষেত্রে

পরিচ্ছন্ন বীজ বপনের কথা বলতেন

সবত্সা গাভীর মত

দুগ্ধবতী শস্যের পরিচর্যার কথা বলতেন

তিনি কবি এবং কবিতার কথা বলতেন।



যে কর্ষণ করে তাঁর প্রতিটি স্বেদবিন্দু কবিতা

কর্ষিত জমির প্রতিটি শস্যদানা কবিতা।



যে কবিতা শুনতে জানে না

শস্যহীন প্রান্তর তাকে পরিহাস করবে।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে মাতৃস্তন্য থেকে বঞ্চিত হবে।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে আজন্ম ক্ষুধার্ত থেকে যাবে।



যখন প্রবঞ্চক ভূস্বামীর প্রচন্ড দাবদাহ

আমাদের শস্যকে বিপর্যস্ত করলো

তখন আমরা শ্রাবণের মেঘের মত

যূথবদ্ধ হলাম।

বর্ষণের স্নিগ্ধ প্রলেপে

মৃত মৃত্তিকাকে সঞ্জীবিত করলাম।

বারিসিক্ত ভূমিতে

পরিচ্ছন্ন বীজ বপন করলাম।

সুগঠিত স্বেদবিন্দুর মত

শস্যের সৌকর্য অবলোকন করলাম,

এবং এক অবিশ্বাস্য আঘ্রাণ

আনিঃশ্বাস গ্রহণ করলাম।

তখন বিষসর্প প্রভুগণ

অন্ধকার গহ্বরে প্রবেশ করলো

এবং আমরা ঘন সন্নিবিষ্ট তাম্রলিপির মত

রৌদ্রালোকে উদ্ভাসিত হলাম।

তখন আমরা সমবেত কন্ঠে

কবিতাকে ধারণ করলাম।

দিগন্ত বিদীর্ণ করা বজ্রের উদ্ভাসন কবিতা

রক্তজবার মত প্রতিরোধের উচ্চারণ কবিতা।



যে কবিতা শুনতে জানে না

পরভৃতের গ্লানি তাকে ভূলুন্ঠিত করবে।

যে কবিতা শুনতে জানে না

অভ্যূত্থানের জলোচ্ছ্বাস তাকে নতজানু করবে।

যে কবিতা শুনতে জানে না

পলিমাটির সৌরভ তাকে পরিত্যাগ করবে।



আমি কিংবদন্তির কথা বলছি

আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।

তিনি স্বপ্নের মত সত্য ভাষণের কথা বলতেন

সুপ্রাচীন সংগীতের আশ্চর্য ব্যাপ্তির কথা বলতেন

তিনি কবি এবং কবিতার কথা বলতেন।



যখন কবিকে হত্যা করা হল

তখন আমরা নদী এবং সমুদ্রের মোহনার মত

সৌভ্রত্রে সম্মিলিত হলাম।

প্রজ্জ্বলিত সূর্যের মত অগ্নিগর্ভ হলাম।

ক্ষিপ্রগতি বিদ্যুতের মত

ত্রিভূবন পরিভ্রমণ করলাম।

এবং হিংস্র ঘাতক নতজানু হয়ে

কবিতার কাছে প্রাণভিক্ষা চাইলো।



তখন আমরা দুঃখকে ক্রোধ

এবং ক্রোধকে আনন্দিত করলাম।



নদী এবং সমুদ্রে মোহনার মত

সম্মিলিত কন্ঠস্বর কবিতা

অবদমিত ক্রোধের আনন্দিত উত্সারণ কবিতা।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে তরঙ্গের সৌহার্দ থেকে বঞ্চিত হবে।

যে কবিতা শুনতে জানে না

নিঃসঙ্গ বিষাদ তাকে অভিশপ্ত করবে।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে মূক ও বধির থেকে যাবে।

আমি কিংবদন্তির কথা বলছি

আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।

তাঁর পিঠে রক্তজবার মত ক্ষত ছিল

আমি একগুচ্ছ রক্তজবার কথা বলছি।



আমি জলোচ্ছ্বাসের মত

অভ্যূত্থানের কথা বলছি

উত্ক্ষিপ্ত নক্ষত্রের মত

কমলের চোখের কথা বলছি

প্রস্ফুটিত পুষ্পের মত

সহস্র ক্ষতের কথা বলছি

আমি নিরুদ্দিষ্ট সন্তানের জননীর কথা বলছি

আমি বহ্নমান মৃত্যু

এবং স্বাধীনতার কথা বলছি।



যখন রাজশক্তি আমাদের আঘাত করলো

তখন আমরা প্রাচীণ সংগীতের মত

ঋজু এবং সংহত হলাম।

পর্বত শৃংগের মত

মহাকাশকে স্পর্শ করলাম।

দিকচক্রবালের মত

দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হলাম;

এবং শ্বেত সন্ত্রাসকে

সমূলে উত্পাটিত করলাম।



তখন আমরা নক্ষত্রপুঞ্জের মত

উজ্জ্বল এবং প্রশান্ত হলাম।



উত্ক্ষিপ্ত নক্ষত্রের প্রস্ফুটিত ক্ষতচিহ্ন কবিতা

স্পর্ধিত মধ্যাহ্নের আলোকিত উম্মোচন কবিতা।



যে কবিতা শুনতে জানে না

সে নীলিমাকে স্পর্শ করতে পারে না।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে মধ্যাহ্নের প্রত্যয়ে প্রদীপ্ত হতে পারে না।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে সন্ত্রাসের প্রতিহত করতে পারে না।



আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি

আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।

আমি শ্রমজীবী মানুষের

উদ্বেল অভিযাত্রার কথা বলছি

আদিবাস অরণ্যের

অনার্য সংহতির কথা বলছি

শৃংখলিত বৃক্ষের

উর্দ্ধমুখী অহংকারের কথা বলছি,

আমি অতীত এবং সমকালের কথা বলছি।

শৃংখলিত বৃক্ষের উর্দ্ধমুখী অহংকার কবিতা

আদিবাস অরণ্যের অনার্য সংহতি কবিতা।



যে কবিতা শুনতে জানে না

যূথভ্রষ্ট বিশৃংখলা তাকে বিপর্যস্ত করবে।

যে কবিতা শুনতে জানে না

বিভ্রান্ত অবক্ষয় তাকে দৃষ্টিহীন করবে।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে আজন্ম হীনমন্য থেকে যাবে।



যখন আমরা নগরীতে প্রবেশ করলাম

তখন চতুর্দিকে ক্ষুধা।

নিঃসঙ্গ মৃত্তিকা শস্যহীন

ফলবতী বৃক্ষরাজি নিস্ফল

এবং ভাসমান ভূখন্ডের মত

ছিন্নমূল মানুষেরা ক্ষুধার্ত।



যখন আমরা নগরীতে প্রবেশ করলাম

তখন আদিগন্ত বিশৃংখলা।

নিরুদ্দিষ্ট সন্তানের জননী শোকসন্তপ্ত

দীর্ঘদেহ পুত্রগণ বিভ্রান্ত

এবং রক্তবর্ণ কমলের মত

বিস্ফোরিত নেত্র দৃষ্টিহীন।

তখন আমরা পূর্বপুরুষকে

স্মরণ করলাম।

প্রপিতামহের বীর গাঁথা

স্মরণ করলাম।

আদিবাসী অরণ্য এবং নতজানু শ্বাপদের কথা

স্মরণ করলাম।



তখন আমরা পর্বতের মত অবিচল

এবং ধ্রুবনক্ষত্রের মত স্থির লক্ষ্য হলাম।



আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি

আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।

আমি স্থির লক্ষ্য মানুষের

সশস্ত্র অভ্যুত্থানের কথা বলছি

শ্রেণীযুদ্ধের অলিন্দে

ইতিহাসের বিচরণের কথা বলছি

আমি ইতিহাস এবং স্বপ্নের কথা বলছি।



স্বপ্নের মত সত্যভাষণ ইতিহাস

ইতিহাসের আনন্দিত অভিজ্ঞান কবিতা

যে বিনিদ্র সে স্বপ্ন দেখতে পারে না

যে অসুখী সে কবিতা লিখতে পারে না।



যে উদ্গত অংকুরের মত আনন্দিত

সে কবি

যে সত্যের মত স্বপ্নভাবী

সে কবি

যখন মানুষ মানুষকে ভালবাসবে

তখন প্রত্যেকে কবি।



আমি কিংবদন্তির কথা বলছি

আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।

আমি বিচলিত বর্তমান

এবং অন্তিম সংগ্রামের কথা বলছি।



খন্ডযুদ্ধের বিরতিতে

আমরা ভূমি কর্ষণ করেছি।

হত্যা এবং ঘাতকের সংকীর্ণ ছায়াপথে

পরিচ্ছন্ন বীজ বপন করেছি।

এবং প্রবহমান নদীর সুকুমার দাক্ষিণ্যে

শস্যের পরিচর্যা করছি।



আমাদের মুখাবয়ব অসুন্দর

কারণ বিকৃতির প্রতি ঘৃণা

মানুষকে কুশ্রী করে দ্যায়।

আমাদের কণ্ঠস্বর রূঢ়

কারণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ

কণ্ঠকে কর্কশ করে তোলে।

আমাদের পৃষ্ঠদেশে নাক্ষত্রিক ক্ষতচিহ্ন

কারণ উচ্চারিত শব্দ আশ্চর্য বিশ্বাসঘাতক

আমাদেরকে বারবার বধ্যভূমিতে উপনীত করেছে।



আমি কিংবদন্তির কথা বলছি

আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।

আমার সন্তানেরা

আমি তোমাদের বলছি।

যেদিন প্রতিটি উচ্চারিত শব্দ

সূর্যের মত সত্য হবে

সেই ভবিষ্যতের কথা বলছি,

সেই ভবিষ্যতের কবিতার কথা বলছি।



আমি বিষসর্প প্রভুদের

চির প্রয়াণের কথা বলছি

দ্বন্দ্ব এবং বিরোধের

পরিসমাপ্তির কথা বলছি

সুতীব্র ঘৃণার

চূড়ান্ত অবসানের কথা বলছি।



আমি সুপুরুষ ভালবাসার

সুকণ্ঠ সংগীতের কথা বলছি।



যে কর্ষণ করে

শস্যের সম্ভার তাকে সমৃদ্ধ করবে।

যে মত্স্য লালন করে

প্রবহমান নদী তাকে পুরস্কৃত করবে।

যে গাভীর পরিচর্যা করে

জননীর আশীর্বাদ তাকে দীর্ঘায়ু করবে।

যে লৌহখন্ডকে প্রজ্জ্বলিত করে

ইস্পাতের তরবারি তাকে সশস্ত্র করবে।

দীর্ঘদেহ পুত্রগণ

আমি তোমাদের বলছি।

আমি আমার মায়ের কথা বলছি

বোনের মৃত্যুর কথা বলছি

ভাইয়ের যুদ্ধের কথা বলছি

আমি আমার ভালবাসার কথা বলছি।

আমি কবি এবং কবিতার কথা বলছি।



সশস্ত্র সুন্দরের অনিবার্য অভ্যুত্থান কবিতা

সুপুরুষ ভালবাসার সুকণ্ঠ সংগীত কবিতা

জিহ্বায় উচ্চারিত প্রতিটি মুক্ত শব্দ কবিতা

রক্তজবার মতো প্রতিরোধের উচ্চারণ কবিতা।



আমরা কি তাঁর মত কবিতার কথা বলতে পারবো

আমরা কি তাঁর মত স্বাধীনতার কথা বলতে পারবো।




 -    আবু জাফর উবা্য়দুল্লাহ

আট বছর আগের এক দিন


শোনা গেল লাশকাটা ঘরে
নিয়ে গেছে তারে;
কাল রাতে - ফাল্গুনের রাতের আধাঁরে

যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
মরিবার হল তার সাধ। বধূ শুয়ে ছিল পাশে - শিশুটিও ছিল;
প্রেম ছিল,আশা ছিল-জোৎসনায়,-তবে সে দেখিল
কোন ভূত? ঘুম কেন ভেঙে গেলো তার?
অথবা হয়নি ঘুম বহুকাল - লাশকাটা ঘরে শুয়ে ঘুমায় এবার।
এই ঘুম চেয়েছিলো বুঝি!

রক্তফেনা-মাখা মুখে মড়কের ইদুঁরের মত ঘাড় গুজি
আধার ঘুজির বুকে ঘুমায় এবার;
কোনোদিন জাগিবেনা আর।

কোনোদিন জাগিবেনা আর।
জাগিবার গাঢ় বেদনার
অবিরাম - অবিরাম ভার
সহিবেনা আর -
এই কথা বলেছিলো তারে
চাঁদডুবে লে গেলে - অদ্ভুদ আঁধারে
যেন তার জানালার ধারে
উটের গ্রীবার মতো কোন এক নিস্তব্ধতা এসে।

তবুও পেঁচা জাগে;
গলিত স্থবির ব্যাঙ আরো দুই মুহূর্তের ভিক্ষা মাগে।
আরেকটি প্রভাতের ইশারায় - অনুমেয় উষ্ণ অনুরাগে
টের পাই যুথচারী আঁধারের গাঢ় নিরুদ্দেশে
চারদিকে মশারির ক্ষমাহীন বিরুদ্ধতা
মশা তার অন্ধকার সংগ্রামে জেগে থেকে জীবনের স্রোত ভালোবাসে

রক্ত ক্লেদ বসা থেকে রোদ্রে ফের উড়ে যায় মাছি;
সোনালি রোদের ঢেউয়ে উড়ন্ত কীটের খেলা কতো দেখিয়াছি।
ঘনিষ্ঠ আকাশ যেন - যেন কোন বির্কীন জীবন
অধিকার রে আছে ইহাদের মন;
চাঁদ ডুবে গেলে পর প্রধান আঁধারে তুমি অশ্বথের কাছে
একগাছা দড়ি হাতে গিয়েছিলে তবু একা - একা,
যে জীবন ফড়িঙের,দোয়েলের-মানুষের সাথে তার হয়নাকো দেখা
এই জেনে।

অশ্বথের শাখা
করেনি কি প্রতিবাদ ? জোনাকির ভিড় এসে
সোনালী ফুলের স্নিগ্ধ ঝাঁকে
করেনি কি মাখামাখি?
থুরথুরে অন্ধ পেঁচা এসে
বলেনি কি; ‘বুড়ি চাঁদ গেছে বুঝি বেনোজলে ভেসে
চমৎকার !
ধরা যাক দু-একটা ইঁদুর এবার!’
জানায়নি পেঁচা এসে -তুমুল গাড় সমাচার ?

জীবনের এই স্বাদ-সুপক্ক যবের ঘ্রান হেমন্তের বিকেলের-
তোমার অসহ্য বোধ লো;
মর্গে কি হৃদয় জুড়ালো
মর্গে - গুমোটে-
থ্যাঁতা ইঁদুরের মতো রক্তমাখা ঠোঁটে।
শোনো
তবু মৃতের গল্প; কোনো
নারীর প্রণয়ে ব্যর্থ হয় নাই;
বিবাহিত জীবনের সাধ
কোথাও রাখেনি কোন খাদ,
সময়ের উদ্বর্তনে উঠে এসে বধু
মধু-আর মননের মধু
দিয়েছে জানিতে;
হাড়হাবাতের গ্লানি বেদনার শীতে
-জীবন কোনদিন কেঁপে ওঠে নাই;
তাই
লাশকাটা ঘরে
চিৎ 'য়ে শুয়ে আছে টেবিলের পরে।

জানি - তবু জানি
নারীর হৃদয়-প্রেম-শিশু-গৃহ-নয় সবখানি;
অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয় -
আর এক বিপন্ন বিষ্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে,
ক্লান্ত - ক্লান্ত করে;
লাশকাটা ঘরে
সেই ক্লান্তি নাই;
তাই
লাশকাটা ঘরে
চিৎ 'য়ে শুয়ে আছে টেবিলের পরে।

তবু রোজ রাতে আমি চেয়ে দেখি,আহা,
থুরথুরে অন্ধ পেঁচা অশ্বত্থের ডালে বসে এসে,
চোখ পাল্টায়ে কয়: ‘বুড়ি চাঁদ গেছে বুঝি বেনোজলে ভেসে ?’
চমৎকার !
ধরা যাক দু-একটা ইঁদুর এবার-

হে প্রগাঢ় পিতামহী,আজো চমৎকার ?
আমিও তোমার মতো বুড়ো হবো-বুড়ি চাঁদটারে আমি
রে দিবো কালীদহে বেনোজলে পার;
আমরা দুজনে মিলে শূন্য রে লে যাবো জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার



জীবনানন্দ দাস